উল্লাসকর দত্ত ছিলেন অগ্নিযুগের ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী

উল্লাসকর দত্ত (ইংরেজি: Ullaskar Dutta; ১৬ এপ্রিল ১৮৮৫ — মৃত্যু: ১৭ মে ১৯৬৫) ছিলেন অগ্নিযুগের ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী। আধুনিক বর্বর ব্রিটিশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লাসকর দত্তের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উল্লাসকর দত্ত ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালীকচ্ছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পণ্ডিত প্রবর দ্বিজদাস দত্ত ব্রাহ্মসমাজের সভ্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাল করেছেন। 

উল্লাসকর দত্তের মাতা মুক্তকেশী ছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয় মতবাদের প্রবর্তক স্বামী আনন্দচন্দ্র নন্দীর কন্যা। আনন্দচন্দ্র নন্দীর পুত্র ডা. মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দী এবং পৌত্র বীরেন্দ্র নন্দী, বিবেক নন্দী ও অশোক নন্দীসহ উল্লাসকর দত্ত মাতৃকুল ও পিতৃকুলের প্রায় সকলেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তাই পারিবারিক পরিবেশই উল্লাসকর দত্তকে বিপ্লবী হবার প্রেরণা যুগিয়েছে। এ ছাড়াও উল্লাসকর দত্তের জন্মগ্রাম কালীকচ্ছে অনেক বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে।

উল্লাসকর দত্ত ছিলেন মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তান মোহিনী মোহন দত্তের জন্ম ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে। তৃতীয় সন্তান সুখসাগর দত্তের জন্ম ১৮৯০-এ। সুখ সাগরের পর লাবণ্যময়ী নামে তাদের এক বোন ছিল। উল্লাসকর দত্তের ডাক নাম ছিল পালু।

তাঁর বাল্য ও শৈশব কালীকচ্ছে কাটলেও ১৯০৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরপর বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তাঁর পিতা তখন হাওড়ার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপনা করতেন। সপরিবারে ওখানকার সরকারি বাসভবনে থাকতেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র থাকাকালীন বিপ্লবীদের সাথে উল্লাসকর দত্তের যোগাযোগ বেড়ে যায়। এ সময় তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। কলকাতার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তখন বিশিষ্ট বাগ্মী ও স্বদেশী বিপিনচন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ (১৮৬১-১৯১) অনেকেই বক্তৃতা করতেন। ঐ সময় বিপ্লবী দলে যোগদানের ব্যাপারে উল্লাসকর দত্তের মূল প্রেরণা ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। তিনি তাঁর পিতার বন্ধু এবং মামাত ভাইয়ের শ্বশুর। উল্লাসকর দত্তের মামা মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দীর ছেলে বীরেন্দ্রচন্দ্র নন্দী বিপিন পালের বড় মেয়ে শোভনাকে বিয়ে করেন। বৈবাহিক আত্মীয়তা সূত্রে বিপিন পালের কলকাতার বাসায় উল্লাসকর দত্তের যাতায়াত ছিল। এ সময় তিনি বৌদি শোভনার ছোট বোন লীলা পালের প্রেমে পড়ে যান ।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হলেও পড়াশোনায় মন ছিল না উল্লাসকর দত্তের। তিনি বলতেন, ‘পরাধীন দেশে জজ-ব্যারিস্টার হয়ে কী হবে?’ প্রায় সমবয়সী লীলা পালও বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন। তিনি চান উল্লাসকর দত্ত লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি করুক। কিন্তু সাদা চামড়ার অত্যাচার উল্লাসকর দত্ত সহ্য করতে পারছিলেন না। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক মি. রাসেলের এক অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদ করলেন। তাকে জুতো দিয়ে পেটালেন। অতঃপর প্রেসিডেন্সি কলেজে লেখাপড়ার পাট চুকে গেলো উল্লাসকর দত্তের। সরকারি চাকুরে পিতা বন্ধু বিপিন পালের পরামর্শে ছেলেকে বোম্বে পাঠিয়ে দিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। ওখানকার ‘ভিক্টোরিয়া জুবিলি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’-এ তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হলো।

কিন্তু স্বদেশী মন্ত্রে দীক্ষিত উল্লাসকর দত্তের মন সেখানে টিকল না। কলকাতায় বিপ্লবীদের গোপন সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের খবর তিনি বন্ধুদের চিঠিপত্রের মাধ্যমে পেতেন। বিপ্লবী ভ্রাতৃদ্বয় অরবিন্দ ঘোষ ও বারীন্দ্র ঘোষের মানিকতলাস্থ মুরারি পুকুর বাগানবাড়িতে বোমা বানানোর তোড়জোড় চলছে। বোম্বের লেখাপড়া জলাঞ্জলি দিয়ে উল্লাসকর দত্ত ফিরে এলেন কলকাতায়। ভিড়ে গেলেন বিপ্লবীদের দলে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক-গবেষক হিমাদ্রিশেখর সরকার লিখেছেন :

“বিলিতি পোশাক ছেড়ে পরলেন দেশি ন’হাতি ধুতি আর চাদর। শুরু করলেন এক বেলা আহার আর যোগাভ্যাস। বেছে নিলেন বিপ্লবীদের কঠোর জীবন। পিতার কলেজের লাইব্রেরিতে রসায়ন বিষয়ক পড়াশুনার পাশাপাশি ব্যবহার করতে থাকলেন কলেজ ল্যাবরেটরি। লক্ষ্য একটাই বোমা বানানো। বহু চেষ্টার পর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে উল্লাসকর দত্ত ও হেমচন্দ্র দাস কানুনগো বোমা তৈরিতে সফল হন। ১৯০৮-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বোমার কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ৫ জন বিপ্লবী দেওঘর এর পাহাড়ে যান। পরীক্ষার সময় এত বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরিত হয় যে, এতে যিনি বোমাটি ছুড়েছিলেন সেই প্রফুল্ল চক্রবর্তী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন উল্লাসকর দত্ত। পরে গোপন চিকিৎসায় কলকাতায় তাকে সুস্থ করা হয়।

প্রফুল্ল চক্রবর্তী বোমা ছুড়েছিলেন। মনে করেছিলেন, বোমা ভূমিতে পড়ার পর ফাটবে। কিন্তু বায়ুর সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং বোমার টুকরা এসে প্রফুল্লর মাথার ডান দিকটায় প্রচণ্ড আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। মারাত্মকভাবে আহত উল্লাসকর দত্তকে কলকাতার ডাক্তার সুন্দরীমোহন দাসের চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে সেদিন আরও যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন- বারীন্দ্র ঘোষ, নলিনীকান্ত গুপ্ত ও বিভূতি সরকার। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি।

সফল বোমা পরীক্ষার প্রায় তিন মাস পর কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বিহারের মজফফরপুরে পাঠানো হয় ক্ষুদিরাম বসু আর প্রফুল চাকীকে। তারা উল্লাসকর দত্তের তৈরি করা বোমা সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই বোমা কিংসফোর্ডের গাড়ির বদলে অন্য ইংরেজের গাড়িতে পড়ে। পরের দিন ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম বসু।

প্রফুল্ল ধরা পড়ার আগে নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। ফাঁসি হয়ে যায় ক্ষুদিরামের ১১ই আগস্ট, ১৯০৮ তারিখে। শুরু হয় ধরপাকড়। মুরারিপুকুর বাগানবাড়িতে বোমা তৈরির কারখানা আবিস্কৃত হয়। অরবিন্দ, বারীন্দ্র, উল্লাসকরসহ ধরা পড়েন প্রায় সবাই। উল্লাসকরের ছোটবেলার দুই বন্ধু ধরণী সেনগুপ্ত ও নগেন সেনগুপ্ত, তারা থাকতেন কলকাতার ১৩৪, হ্যারিসন রোডে। বাড়ি কালীকচ্ছ। ওখানে কবিরাজী ব্যবসা করতেন। ধরা পড়লেন তাঁরাও। অপরাধ, তাদের ঘরে পাঁচটি ‘বইয়ের বাক্স’ রেখেছিলেন উল্লাসকর দত্ত। আসলে ওগুলোতে ছিল বোমা তৈরির সরঞ্জাম। আরও ধরা পড়েন উল্লাসকরের চার বছরের ছোট মামাত ভাই মহেন্দ্র নন্দীর ছেলে অশোক নন্দী।

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে অক্টোবর ২৪ পরগনা জেলা ও দায়রা জজ মি. চার্লস পোর্টেন বিচক্রফট এর আদালতে যে মামলা ওঠে, ইতিহাসে তা ‘আলীপুর বোমা মামলা’ নামে খ্যাত হয়। ঐতিহাসিক এই মামলার বিচারক মি. বিচক্রফট ও আসামি অরবিন্দ ঘোষ কেমব্রিজে সহপাঠী ছিলেন এবং একসাথে আই.সি.এস পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। অরবিন্দ সরকারি চাকুরিতে যোগদান না করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন।

মামলায় উল্লাসকর দত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তবে নিজে বাঁচার জন্য নয়, নিরপরাধ প্রতিবেশী ধরণী ও নগেনকে বাঁচানোর জন্য। ঐতিহাসিক আলীপুর বোমা মামলার রায় বেরোয় ১৯০৯ এর ৬ মে। ৩৬ জন আসামির মধ্যে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষ-এর ফাঁসির আদেশ হয় । হেমচন্দ্র দাস ও অশোক নন্দীসহ ১৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে দ্বীপান্তর কারাদণ্ড হয়। তাত্ত্বিক নেতা অরবিন্দ ঘোষসহ ১৭ জন বেকসুর খালাস পান। এর মধ্যে কালীকচ্ছের ধরণী ও নগেন ছিলেন। কারাগারে অসুস্থতা হেতু মৃত্যুবরণ করেন ২১ বছরের তরুণ কালীকচ্ছের অশোক নন্দী। তারিখটা ছিল ৬ আগস্ট, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ।

ফাঁসির আদেশ শোনার পর উল্লাসকর দত্ত আদালতে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছিলেন ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে/ সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে’। আদালতে ফাঁসির রায় শোনার পর উল্লাসকর দত্ত যেমন উচ্চৈঃস্বরে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছিলেন তেমনি বিচার চলাকালীন সময়ে নির্বিকার ছিলেন। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে বন্দী ছিলেন ভুপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তার নির্বাসিতের আত্মকথায় লিখেছেন:

স্কুল ছুটির পর ছেলেরা যেমন মহাফুর্তিতে বাড়ি ফিরিয়া আসে, আমরাও সেইরূপ আদালত ভাঙিবার পর গান গাহিতে গাহিতে চিৎকার করিতে করিতে গাড়ি চড়িয়া জেলে ফিরিয়া আসিতাম। তাহার পর সন্ধ্যার সময় যখন সভা বসিত তখন বার্লি সাহেব কিরকম ফিরিঙ্গি বাঙ্গালায় সাক্ষীদের জেরা করে, নটন সাহেবের পেন্টুলনটা কোথায় ছেড়া আর কোথায় তালি লাগান, কোর্ট ইনস্পেক্টরের গোঁফের ডগা ইদুরে খাইয়াছে কি আরসুলায় খাইয়াছে এই সমস্ত বিষয়ে উল্লাসকর গভীর গবেষণা করিত, আর আমরা প্রাণ ভরিয়া হাসিতাম।

১৯০৯ সালের ৬ মে আদালতে ফাঁসির হুকুম শুনিয়া উল্লাসকর হাসিতে হাসিতে জেলে ফিরিয়া আসিল, বলিল ‘দায় থেকে বাঁচা গেল’। একজন ইউরোপীয় প্রহরী তাহা দেখিয়া তাহার এক বন্ধুকে ডাকিয়া বলিলেন, Look, Look the man is going to be hanged and he laughs (দেখ, লোকটার ফাঁসি হইবে, তবু সে হাসিতেছে)। তাহার বন্ধুটি আইরিশ, তিনি বলিলেন, Yes, I know, They all laugh at death. (হ্যা, আমি জানি, মৃত্যুও তাহাদের কাছে পরিহাসের বিষয়)। 

ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে অস্বীকৃতি জানান উল্লাসকর দত্ত। কারণ তিনি ব্রিটিশের যে আদালত মানেন না, সে আদালতে আপিল করতে সম্মত নন। অবশেষে তার প্রিয় মামা, যাকে তিনি সবচে বেশি ভালোবাসতেন, সেই মহেন্দ্র নন্দীর অনুরোধে তিনি আপিলের কাগজে সই করেন। ১৯০৯ এর ২৩ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ রদ করে উল্লাসকর দত্ত ও বারীন্দ্র ঘোষের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরাদেশ হয়। বারীন্দ্র ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তসহ দ্বীপান্তরিত অন্যান্যদের আন্দামান জেলে পাঠানো হলো ১৯০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘মহারাজা’ নামক জাহাজে। সমুদ্রের মধ্যে পাহাড়, পাহাড়ের উপর সেলুলার জেল। জেলের তেতলা থেকে সমুদ্র ও পাহাড়ের দৃশ্য সুন্দর দেখালেও বন্দীদের সেখানে যাবার অনুমতি ছিল না। সেলুলার জেলে সাতশো কয়েদি রাখার ব্যবস্থা ছিল। রাজনৈতিক বন্দীরের জন্যই এই জেল তৈরি হয়েছিল। জেলের চারদিকে সমুদ্র, নিকটবর্তী দেশ বর্মা। তিনশ’ মাইল দূরে। কাহারও পালাবার কোনো উপায় নেই।

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর এত লোকের সাজা হয়েছিল যে, ভারতের জেলে রাখার স্থান ছিল না। তাই তাদের আন্দামানে রাখার জন্য এ জেল তৈরি হয়। খুবই অস্বাস্থ্যকর স্থান। একবার সেখানে গেলে দেশে ফেরার আশা ছিল না। তখনকার আন্দামান জেল সম্পর্কে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী তার ‘জেলে ত্রিশ বছর’ বইয়ে লিখেছেন:

আন্দামান জেলের খাওয়া দেশের জেল হইতে অনেক খারাপ। সস্তা রেঙ্গুন আতপ চাউলের ভাত, সারা বৎসর দুই বেলা অড়হর ডাল এবং অখাদ্য ঘাস পাতার তরকারি- ইহাই ছিল নিত্যকার খাদ্য। রাত্রে জেলে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। পায়খানার ব্যবস্থা ছিল অদ্ভুত। রাত্রে প্রত্যেকের সেলে একটি করিয়া মাটির ঘট দেওয়া হইত। এক সেরের বেশি তাহাতে জল ধরিত না । রাত্রে কাহারও পায়খানার বেগ পাইলে প্রথমত তাহাকে অন্ধকারে পা দিয়া ঘটটির অনুসন্ধান করিয়া তাহার মুখ ঠিক করিয়া পরপর মল ও মূত্র ত্যাগ করিতে হইত। মল ও মূত্র দুইটি একসঙ্গে ত্যাগ করিবার উপায় ছিল না। একটি বন্ধ করিয়া অন্যটি ত্যাগ করিতে হইবে। একসঙ্গে দুইটি ত্যাগ করিলে একটি মাটিতে পড়িবে এবং তাহাতে নিজের কোঠাই নষ্ট হইবে। কারণ ২/৩ মাস পর একদিন মলমূত্র ত্যাগের স্থানে চুন লাগাইবে আর মলমূত্র মাটিতে পড়িলে মেথর যদি তাহা রিপোর্ট করে তবে বন্দীর সাজা হইবে। 

আন্দামান জেলে খাওয়ার পরিমাণ যেমন কম ছিল, তেমনি দুর্ব্যবহার ছিল বেশি। পান থেকে চুন খসলেই কিল-চড়-লাথি, গলাধাক্কা, ডাণ্ডাবেড়ি ইত্যাদি সবই চলত। ক্রমাগত অত্যাচার উল্লাসকর দত্তের মনকে বিষিয়ে তুলেছিল। অত্যাচারের মাত্রা কত নিষ্ঠুর ও নির্মম ছিল তা জানা যায় তার রচিত ‘কারাকাহিনী’ থেকে:

নারিকেল ও তিল হইতে তেল নিষ্কাশনের জন্য ভারতে যেভাবে ঘানির সহিত বলদ জোতা হয়, আমাকেও সেইভাবে তৈল নিষ্কাশনের যন্ত্রের সহিত জোয়াল দিয়া জোতা হইয়াছিল। ভারতে ঘানি ব্যবহার করার জন্য বলদ ব্যবহার করা হয় এবং তাহারাও সরিষা হইতে দিনে ষোল পাউন্ডের অধিক তৈল বাহির করিতে পারে না।

আন্দামানের জেলে চাকা ঘুরাইবার হাতলের সহিত মানুষকে জোয়াল দিয়া জোতা হইত এবং দৈনিক আশি পাউন্ড নারিকেল তৈল নিষ্কাশনের কঠিন কর্ম তাহাদের উপর চাপানো হইত। একটি যন্ত্রের হাতলের সহিত তিনজন করিয়া বন্দীকে জোয়াল দিয়া জোতা হইত এবং স্নান ও মধ্যাহ্ন আহারের জন্য ক্ষণিক বিরতি ব্যতীত সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাহাদের অবিরত কাজ করিতে হইত। প্রকৃতপক্ষে যে বিরতি আমাদের দেওয়া হইত তাহা কয়েক মিনিটের অধিক ছিল না।

জন্তু ধীরগতিতে ঘানির চারিদিকে পরিক্রমণ করিতে পারে, কিন্তু আমাদের দৌড়াইতে হইত। আমাদের মনে ভয় ছিল যে, না করিলে আমরা দৈনিক বরাদ্দ অনুযায়ী তৈল বাহির করিতে পারিব না। যদি আমাদের মধ্যে কেহ তাহার গতি মন্থর করিতেন তাহা হইলে জমাদার তাহাকে তাহার হস্তধৃত বৃহৎ লাঠি দিয়া প্রহার করিত। ঐ যষ্ঠিঘাতেও তাহার গতি দ্রুততর না হইলে তাহাকে তাহা বাধ্য করিবার জন্য অন্য একটি পদ্ধতিও ছিল। 

তাহার হাত পা ঐ ঘুরন্ত চাকার হাতলের সঙ্গে বাধিয়া দেওয়া হইত এবং অন্যদের দ্রুতবেগে দৌড়াইবার আদেশ দেওয়া হইত। তখন ঐ হতভাগ্য ব্যক্তির রথচক্রে বাধা মানুষকে ভূমিতে হেঁচরাইয়া টানিয়া লইয়া যাইবার মতই অবস্থা ঘটিত। তাহার সর্বাঙ্গ ছড়িয়া এবং রক্তপাত আরম্ভ হইত। তাহার মাথা মেঝেতে ঠোকা খাইতে খাইতে ক্ষতবিক্ষত হইয়া যাইত। এইভাবে কাজ করাইবার ফলে কী অবস্থা ঘটিত আমি তাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছি। মানুষ মানুষের কী অবস্থা করিতে পারে? এই পদ্ধতিও তাহা দ্বারা সৃষ্ট অত্যাচার। দেখিয়া কবির এই বাণী আমার ওষ্ঠ ভেদ করিয়া বাহির হইয়া আসিত। 

এই কাজ করিবার পর সন্ধ্যাবেলা কুঠুরিতে ফিরিয়া আসিয়া আমি সম্পূর্ণরূপে অবসন্ন হইয়া পড়িতাম। পুনরায় এই নিদারুণ বেদনাদায়ক কাজ করিবার জন্য আমি সকাল পর্যন্ত জীবিত থাকিব বলিয়া আমার অন্তরে নিশ্চয়তা ছিল না। তথাপি আমি জীবিতই থাকিতাম ও সারাদিন ঠিকমতই কাজ করিতাম। আমরা সকলেই বলাবলি করিতাম ঐ কাজ করাই আমাদের অদৃষ্টে লেখা আছে এবং আমাদের মূল্য দিতে হইবে। অন্য যে সকল কয়েদি আমাদের সঙ্গে কাজ করিত ছয়মাস বাদেই তাহাদের এই কাজ হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইত ও বাহিরের কাজে পাঠানো হইত। অন্যদল তাহাদের স্থলে কাজ করিতে আসিত এবং নির্দিষ্ট কালের পরেই তাহাদের পূর্ববর্তীদের মতো বাহিরে পাঠাইয়া দেওয়া হইত। কিন্তু আমি ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীরা এই একই গুরুশ্রমজনক কার্যে নিযুক্ত থাকিতাম। বছরের পর বছর বিরামহীনভাবে এই পরিবর্তনহীন কাজ চলিয়াছিল।

অবশেষে একদিন আমিও বাহিরে যাইবার আদেশ পাইলাম। কিন্তু এই পরিবর্তন তপ্ত কড়াই হইতে অগ্নিতে নিক্ষেপ ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। কারণ আমাকে একটি জেলায় অবস্থিত ইট তৈয়ারির কারখানায় পাঠানো হইয়াছিল। আমাকে সারাদিন না পোড়ানো ভিজা ইট বহন করিয়া এধার ওধার ছুটাছুটি করিতে হইত। সাধারণ মানুষের পক্ষেও এই কাজ ছিল সবিশেষ ক্লান্তিকর। সেইজন্য তাহাকে উৎসাহ দিবার জন্য কিছু পরিমাণ দুধ দেওয়া হইত। কিন্তু এই দুধ পান করিবার পূর্বেই উপস্থিত খুদে অফিসার অথবা টিন্ডেল তাহার হাত হইতে পাত্রটি কাড়িয়া লইয়া ঐ দুধ নিজের গলায় ঢালিয়া দিত। 

আমিও আমার অংশমতো দুধ পাইতাম এবং কোনদিকে না তাকাইয়া তৎক্ষণাৎ তাহা পান করিয়া ফেলিতাম। কয়েকদিন পরেই তাহাকে ঐ নৈবেদ্য উৎসর্গ না করায় টিন্ডেল আমার উপর অত্যধিক ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। সে আমার কাজ পরিবর্তন করিয়া এমন কাজ দিল যেখানে শ্রমিকদের জন্য দুধের বরাদ্দ নাই। পরে সে আমাকে বসতির সর্বাধিক শ্রমজনক কাজ দিয়াছিল।

আমাকে খাড়া পথ ধরিয়া উপরে উঠিতে হইত এবং কুয়া হইতে দুই বালতি জল তুলিয়া বালতি দুইটি একটি দণ্ডে দুই দিকে বাঁধিয়া কাঁধে বহন করিয়া একজন অফিসারের গৃহে পৌঁছাইয়া দিয়া আসিতে হইত, বালতি ও জল মিলিয়া ওজন দাঁড়াইত এক মণের কাছাকাছি। পাহাড়ে উঠার পথও ছিল অত্যন্ত খাড়া এবং প্রতিমূহূর্তে আমার পা পিছলাইয়া নিচের উপত্যকায় পড়িয়া যাইবার আশঙ্কা থাকিত। এই খাড়া পথ ধরিয়া উঠা নামার কাজ আমাকে সারাদিন করিতে হইত। দিনের শেষে আমি ক্লান্তিতে মৃতপ্রায় হইয়া পড়িতাম। আমি অনেকদিন ধরিয়া এই কাজ করিয়াছিলাম। অবশেষে এই কাজের প্রতি আমার অতিশয় বিরক্তি জন্মিল ও আমি আর তাহা করিতে অসম্মতি জানাইলাম। 

আমার বিরুদ্ধে অবাধ্যতা ও কাজ ফাকি দিবার অভিযোগ আনা হইয়াছিল। ম্যাজিট্রেট আমাকে কিছুদিন হাসপাতালে বিশ্রাম করিয়া পুনরায় এই কাজ আরম্ভ করিতে রাজী করাইবার জন্য তাঁহার যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু আমি মনস্থির করিয়া ফেলিয়াছিলাম। আমরা রাজনৈতিক বন্দীরা জেলের বসতির নিয়ম বা বিধি অনুযায়ী সকল কার্য করিয়া থাকি কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের সম্পর্কে কোনো রকম সুবিবেচনার পরিচয় দেন না। তবে আমরাই বা কেন তাহাদের ইচ্ছা পূরণ করিবার জন্য নত হইব? আমরা যতই পরিশ্রম করি তাহারা ততই আরও বেশি শ্রম করাইতে চান। আমাদের শরীর লইয়া তাহারা যাহা ইচ্ছা করুন কিন্তু আমাদের মন আমরা অন্তত স্বাধীন রাখিব । তাহারা আমার দেহকে শাসন করিতে পারেন নি। 

আমার অন্তরের প্রভু আমিই। আমি নিজ হইতে আমাকে তাহাদের দাসে পরিণত করিব না। আমাকে তিন মাসের জন্য অতিরিক্ত কাজের পরিশ্রম করিবার দণ্ড দেওয়া হইয়াছিল এবং কুঠুরিতে তালাবন্ধ করিয়া রাখিবার জন্য আমাকে ফেরত পাঠানো হইয়াছিল। 

সেই বন্দীশালার ফটকের নিকট সেই মি. ব্যারী আমাকে দেখিবামাত্র গর্জন করিয়া উঠিয়াছিঠলেন- ‘ইহা খেলার মাঠ নয়, মনে রাখিবে ইহা জেলখানা। তুমি যদি নিয়মবিরুদ্ধ কাজ কর তাহা হইলে আমি তোমাকে বেত দিয়া পিটাইব। আমি ত্রিশ ঘা বেত লাগাইব এবং ইহার প্রত্যেকটিই তোমার মাংস কাটিয়া বসিবে।’

আমি উত্তর দিয়াছিলাম- ‘তুমি আমার দেহকে টুকরো টুকরো করিতে পার কিন্তু আমি এখানে আর কোনো কাজই করিব না। কারণ আমি মনে করি যে তোমার আদেশ অনুযায়ী কাজ করা আমার বিবেকের বিরুদ্ধে অপরাধ করারই শামিল।’ 

সঙ্গে সঙ্গে মি. ব্যারি আদেশ দিলেন যে, আমার হস্তদ্বয় শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হইবে এবং ঐ শৃঙ্খলের সাহায্যে আমাকে এক সপ্তাহের জন্য আমার কুঠুরির মধ্যে উপর হইতে ঝুলাইয়া রাখা হইবে। 

১০৭ ডিগ্রী জ্বর লইয়া শৃঙ্খল দিয়া ঝুলাইয়া রাখিলে মস্তিষ্ক বিকৃতি ছাড়া আর কী ঘটিতে পারে? 

মানসিক অর্ধচৈতন্য অবস্থা ও দৈহিক তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও আমি সুস্পষ্টভাবেই অনুভব করিতে পারিয়াছিলাম যে, মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট আমার উপর তাহার ইলেকট্রিক ব্যাটারী প্রয়োগ করিয়াছিল। এই শক সহ্য করা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। বিদ্যুৎ চমকের মতোই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ আমার সর্বাঙ্গে প্রবাহিত হইয়াছিল। মনে হইয়াছিল আমার দেহে শয়তান আশ্রয় লইয়াছে। যে সকল শব্দ আমার ওষ্ঠাধর হইতে বাহির হইয়াছিল। তাহা আমি পূর্বে কোনোদিন উচ্চারণ করি নাই। আমি এমনভাবে আর্তনাদ করিয়াছিলাম যাহা জীবনে কোনোদিন করি নাই। তারপর হঠাৎ অচৈতন্য হইয়া পড়িয়াছিলাম। তিনদিন আমি দিবারাত্র অজ্ঞান হইয়া ছিলাম। আমার জ্ঞান সঞ্চারের পর আমার বন্ধুরা ইহা আমাকে বলিয়াছিল।”

প্রতিবাদী উল্লাসকর এহেন অন্যায় মেনে নেন নি। তিনি এর বিরুদ্ধে জেলে আন্দোলন করলেন কোনো পরিশ্রমের কাজ করবেন না। ফলে শাস্তি অন্যত্র বদলি। আন্দামানেরই অন্য জেলে। আরও কষ্টের জায়গায়। তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লো। আলীপুর জেলে থাকাকালীন তিনি অলীক স্বপ্ন দেখা বা ‘হ্যালুসিনেশন’ নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। এখানে এসে এই রোগ আরও বাড়ে। খিচুনিও দেখা দেয়। তাকে পাঠানো হলো মাদ্রাজের মানসিক স্বাস্থ্য নিবাসে। ওখানে চিকিৎসা চলল প্রায় ছয় বছর। প্রায় ১২ বছর কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি মিলল উল্লাসকর দত্তের। সালটা ১৯২০।

কারাগার থেকে মুক্তির পর ফিরে এলেন কলকাতায়। কিছুদিন পর চলে এলেন জন্মগ্রাম কালীকচ্ছে। এখানে এসেও শান্তি পেলেন না। পুলিশের নজর তার দিকে। প্রতি সপ্তাহে একদিন থানায় হাজিরা দিতে হবে। কালীকচ্ছে বাড়িতে নিঃসঙ্গ উল্লাসকর দত্ত। মা-বাবা কুমিল্লায়। দাদা মোহিনী মোহন কলকাতায়। ছোট ভাই সুখসাগর লন্ডনে, আর ছোট বোন লাবণ্যকেশী মারা গেছেন তাঁর কারাজীবনকালেই। 

মনে পড়লো লীলাকে। লীলার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, আবার বিধবাও হয়ে গিয়েছেন। কালীকচ্ছে মন টিকলো না। ছুটে গেলেন কলকাতায়। ইতিমধ্যে দেশ ভাগ হয়ে গেছে। তিনি দেশভাগ মেনে নিতে পারলেন না। শরণার্থীর স্রোত তাঁকে ভীষণ কষ্ট দিল। স্বাধীনতার নামে দেশভাগ তার কাম্য ছিল না। কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা না পেয়ে তিনি আক্ষেপ করেছেন। দেশভাগের জন্য যারা দায়ি তাদেরকে তিনি দেশদ্রোহী মনে করতেন। তাই বিভক্ত বাংলায় বসবাস না করে তিনি চলে গেলেন আসামের শিলচরে। তার আগে ১৯৪৮ সালে বিয়ে করলেন প্রথম জীবনের প্রেমিকা বিধবা লীলা পালকে।

উল্লাসকর দত্ত মনে করতেন, একমাত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব। গণশত্রু মোহনদাস গান্ধীর অহিংস নীতিতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। বলতেন, ‘বৈষ্ণব মতে দেশ স্বাধীন হয় না।’ তিনি বিশ্বাস করতেন, আঞ্চলিক দেশপ্রেম বা রাজনৈতিক স্বাধীনতা মানুষের রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় শেষ কথা হতে পারে না। তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন, যাতে সমগ্র মানবজাতি এক হতে পারে। যে কোনোও ধরনের রাজনৈতিক প্রচেষ্টা সেই বিশ্বরাজনীতিতে পৌঁছানোর প্রস্তুতি বলেই তিনি মনে করতেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের দিনগুলোতে যে বঙ্গদেশের অঙ্গচ্ছেদ রোধ করতে তিনি তাঁর জীবন উৎস্বর্গ করেছিলেন, সেই বিভক্ত বাংলদেশে উল্লাসকর দত্ত বাস করতে চান নি। তাই শেষ জীবনটা তিনি আসামের শিলচরে কাটিয়েছেন। গণশত্রু নেহরু সরকার রাজনৈতিক কারণে নিপীড়িত দেশ সেবকদের জন্য যে অনুদানের ব্যবস্থা করেছিল, তিনি তাও গ্রহণ করেনি। অর্থমূল্যে তিনি তাঁর দেশপ্রেমকে ক্ষুন্ন করতে চান নি। ‘দ্বীপান্তরের কথা’ ও ‘আমার কারাকাহিনী’ গ্রন্থে তিনি তাঁর আত্মজীবনী বর্ণনা করেছেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে আসামে এই বীর বিপ্লবীর জীবনাবসান ঘটে। তার তিন বছর পূর্বে ১৯৬২ সালে মৃত্যু হয় লীলা পালের।[১]

তথ্যসূত্র

১. জয়দুল হোসেন, অবিভক্ত বাংলার অসমাপ্ত বিপ্লব, গতিধারা, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠা ২৯০-২৯৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!