উজ্জ্বলা মজুমদার সশস্ত্র বিপ্লবী নারী ও সমাজসেবী

উজ্জ্বলা মজুমদার ছিলেন একজন বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লবী নারী ও সমাজকর্মী। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে রাজনৈতিক জ্ঞান পেয়েছিলেন। জমিদার বাড়ির মেয়ে হওয়ার পরেও অন্যের দুঃখে দুঃখী হয়েছেন। ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন।  

উজ্জ্বলা মজুমদার-এর শৈশবজীবন

১৯১৪ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা শহরে উজ্জ্বলা মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সুরেশচন্দ্র মজুমদার। ঢাকা জেলায় কুসুমহাটির সুরেশচন্দ্র মজুমদারের জমিদার পরিবার সাহসে ও দাক্ষিণ্যে সমৃদ্ধ বলে পরিচিত ছিল। আট বছর বয়সে উজ্জ্বলার মাতৃবিয়োগ হয়। পিতা বিপ্লবীদের সঙ্গে নানাভাবে কাজ করতেন। ১৯২৮ সালে উজ্জ্বলার বয়স যখন ১৪ বছর তখন তার বাবা কলিকাতা থেকে ঢাকা শহরে দু-একটি অস্ত্র নিয়ে যাওয়া আসা করতে কন্যার কোমরে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। এভাবেই ঢাকা চলে যান। মুখে বিপ্লবের কথা বলার কোনো প্রয়োজনীয় ছিল না। তাকে দিয়ে এই বিপ্লবী কাজ করানোর অর্থই ছিল তাকে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া। উজ্জ্বলা বুঝলেন ইংরেজের অধীনতা-পাশ থেকে মুক্তি পাবার এই প্রকৃষ্ট পথ। বিপ্লবী সুকুমার ঘোষ এবং মধুসূদন ব্যানার্জি দুজনেই উজ্জ্বলা মজুমদারের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তিনি ‘বি. ভি.’ নামক বিপ্লবীদলে যোগদান করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বিপ্লবী ও সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা

১৯৩০-৩২ সাল বাংলার ইতিহাসে তথা ভারতের ইতিহাসে এসেছিল মহা কর্মসাধনার কাল। একদিকে অসহযোগ আন্দোলন করে তুলেছিল সমগ্র ভারতবর্ষকে ইংরেজ বিরোধী, অন্যদিকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, রাইটার্স বিল্ডিংসে বিপ্লবীদের কাণ্ড, লোম্যান-সিম্পসন-পেডি-গার্লিক-স্টিভেন্স ক্যামেরন-ডগলাস-বার্জ হত্যা; এবং হডসন-নেলসন-ভিলিয়ার্স-ক্যাসেল-গ্রাসবি-ডুনো-জ্যাকসন প্রমুখের রক্তাক্ত রূপ ভারতবাসীকে বিস্মিত করে তুলেছিল এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীকে ভয়স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।

এদেশের নারী তখন প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ। শান্তি, সুনীতি ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে নিহত করেছেন। বীণা দাস কলিকাতা সেনেট-হলে গভর্নর জ্যাকসনকে গুলী করেছেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার শহীদ হয়েছেন। ওদিকে ‘বেণু’, ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা এবং ‘চলার পথে’ প্রভৃতি পুস্তক বিপ্লবের পথে আত্মহুতি দেবার জন্য যুব-বাংলাকে আহ্বান জানাচ্ছিল। সেই আহ্বান সেই যুগে তরুণ-তরুণীদের চিত্তে বার বার ধ্বনিত হচ্ছিল। উজ্জ্বলাও প্রভাবিত হয়েছিলেন।

উজ্জ্বলা মজুমদার-এর রাজনৈতিক জীবন

অন্যান্য বিপ্লবীদের জীবন ও কাজ দেখে উজ্জ্বলা ছাত্রী ও তরুণীদের মধ্যে বিপ্লবের বীজ অঙ্কুরিত করে চলেছিলেন। তাদের বাড়িটা তখন ছিল বিপ্লবীদের একটা আড্ডা। নির্বিরোধ বিমাতা এবং স্নেহাশীলা ঠাকুরমা কোনোদিকেই নজর দিতে পারতেন না। পিতাও অধিকাংশ সময় ব্যবসায় উপলক্ষে কলিকাতা থাকতেন। প্রথমজীবনে গ্রামে থাকায় উজ্জ্বলার পাঠ্যজীবন দেরিতে আরম্ভ হয়। প্রায় কুড়িবছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ঠাকুরমাদের জানালেন পরীক্ষার পর বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন কয়েকদিনের জন্য। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিপ্লবী বন্ধুদের সঙ্গে একবস্ত্রে চলে আসেন তিনি কলিকাতা, তারপর দার্জিলিং। দার্জিলিং পৌঁছে তারা শুনলেন গভর্নর একটি ‘ফ্লাওয়ার শো’- তে আসছেন। কৌশলে তারা সেখানে উপস্থিত হলেন, কিন্তু কাজ সমাধা করা সম্ভব হ’ল না। তবু তারা উৎসাহ হারালেন না।

১৯৩৪ সালের মে মাসে পুলিসের সমস্ত সতর্কতা উপেক্ষা করে কয়েকটি তরুণ ও একটি তরুণী দার্জিলিং এসে পৌঁছলেন একটা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। দার্জিলিং-এর স্নো-ভিউ হোটেলে উঠলেন উজ্জ্বলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জী এবং জুবিলি স্যানাটোরিয়ামে উঠলেন ভবানী ভট্টচার্য ও রবি ব্যানাজী। একটি হারমোনিয়ামের মধ্যে উজ্জ্বলা মজুমদার এনেছিলেন দুটি আগ্নেয়াস্ত্র দুর্ধর্ষ অ্যান্ডারসানের উপর আক্রমণের জন্য। ৮ মে ১৯৩৪ সালে যে অ্যান্ডারসনকে বিপ্লবীরা গুলি করার জন্য কার্যস্থির করেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রবল প্রতাপশালী গভর্নর। পরবর্তিতে অ্যান্ডারসনকে হত্যার প্রচেষ্টার জন্যেই ফাঁসি হয় বিপ্লবী ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্যের। বর্তমান ‘অ্যান্ডারসন হাউজ’ এখন ‘ভবানীভবন’ নামে পরিচিত।

লেবং রেসকোর্সে আক্রমন

সেদিন ৮ মে ১৯৩৪ সাল দার্জিলিং শহরে লেবং-এর মাঠে ঘোড়দৌড় হচ্ছে। গভর্নর অ্যান্ডারসন উপস্থিত থাকবেন। স্যানাটোরিয়াম থেকে দামী ইওরোপীয় পোশাক পরে ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জী বের হলেন। তাদের সঙ্গে লুক্কায়িত আছে গুলীভরা রিভলভার। তাদের দূর থেকে অনুসরণ করে চললেন উজ্জ্বলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানাজী। উজ্জ্বলা মজুমদারের পরনে একটি রঙীন শাড়ি, চোখে হাই-পাওয়ারের চশমা। মনোরঞ্জন ব্যানার্জী পরিধান করেছেন স্বদেশী পরিচ্ছদ। ঘোড়দৌড়ের মাঠে সকলেই উপস্থিত হলেন। গভর্নর তার আসনে উপবিষ্ট। ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানাজী গভর্নরের কাছাকাছি রিভলভারের তাকমতো জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছেন। এখন প্রার্থিত লগ্নের অপেক্ষা।

এদিকে দলের নির্দেশমতো উজ্জ্বলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জীর কাজ হয়ে গেছে। তারা লেবং ত্যাগ করলেন। দার্জিলিং স্টেশনে এসে অতি স্বাভাবিকভাবে তারা ট্রেনে উঠে বসলেন। টিকিট করাই ছিল। ততক্ষণে লেবং-এর মাঠে ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানাজীর আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠেছে। লেবং রেসকোর্সে অ্যান্ডারসনের দুই পাশে বসেছিলেন মিঃ ট্যান্ডি এবং বারোয়ারির রাজা। এঁরাই বিপ্লবী ভবানী ভট্টাচার্য এবং রবীন্দ্র ব্যানাজীর উপর ঝাপিয়ে পড়েন। পুলিশও গুলি চালায়, যাতে দুই বিপ্লবী আহত হন। উজ্জ্বলা যে ট্রেনে উঠেছিলো তা সন্ধ্যার একটু আগে শিলিগুড়িতে এসে পৌছালে পুলিস বাহিনী হন্তদন্ত হয়ে ট্রেন ঘেরাও করল। টেলিফোন কলে তারা আদেশ পেয়েছে ট্রেন তল্লাসী করে একটি মেয়েকে গ্রেপ্তার করতে। তার চোখে হাই-পাওয়ারের চশমা, পরনে গোলাপী রঙের। শাড়ি ও গায়ের রঙ গৌর। পুলিসের দৃষ্টি উজ্জ্বলা মজুমদারের উপরেও পড়ল। কিন্তু তার চোখে চশমা নেই, পরনেও সাদা শাড়ি। তারা দুজনে কলিকাতা এসে পৌছালেন।

উজ্জ্বলা মজুমদার-এর কারাবরণ

অবশেষে পুলিস উজ্জ্বলা মজুমদারকে খুঁজে বের করল ভবানীপুরে শোভারানী দত্তের বাসায়। শোভারাণী ‘যুগান্তর’-দলের কর্মী। রাজনৈতিক সংগ্রামের পুরোভাগে তখনকার দিনে যে-কয়েকটি মহিলা অগ্রসর হয়েছিলেন শোভারানী দত্ত তাদের অন্যতম। শোভারানী দত্তের বাসা থেকে ১৮ মে উজ্জ্বলা মজুমদার ও শোভারানী দত্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস নিয়ে যায়। শোভারানী অবশ্য লেবং ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু এই সূত্রে তার দুর্ভোগ ও লাঞ্ছনার সীমা ছিল না। উজ্জ্বলাকে আনা হয় প্রথমে কার্সিয়াং জেলে এবং পরে দার্জিলিং জেলে। তার বিপ্লবী বন্ধু ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জী দার্জিলিং জেলে ছিলেন আগে থেকেই। কলিকাতা থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছিল মনোরঞ্জন ব্যানার্জী, মধু ব্যানাজী, সুকুমার ঘোষ প্রভৃতিকে।

লেবং ষড়যন্ত্র মামলা

এরজন্য স্পেশাল ট্রাইবুনালের মামলা শুরু হয়েছে। সকলেই মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা শুনবার জন্য প্রস্তুত; বিচারে ভবানী ভট্টাচার্য, রবি ব্যানার্জী ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জীর ফাসির হুকুম হয়, উজ্জ্বলা মজুমদারের সাজা হয় বিশ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড, অপর বন্দীদের সাজা হয় দ্বীপান্তরের। হাইকোর্টের আপীলের রায়ে ভবানী ভট্টাচার্যের ফাসির হুকুম বহাল রইল। মনোরঞ্জন ও রবি ব্যানাজীর বিশ বৎসর এবং উজ্জ্বলা মজুমদারের চৌদ্দ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হল। দণ্ডিত বন্দীরা আন্দামান দ্বীপান্তরিত হন। উজ্জ্বলা মজুমদারকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে। মৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন বিপ্লবী ভবানী ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ব্যানার্জি ও রবীন্দ্রনাথ ব্যানার্জির পক্ষে হাইকোর্টে সওয়াল করেন তৎকালীন প্রখ্যাত আইনজীবী সুধাংশুশেখর মুখার্জি, সুরজিৎ চন্দ্র লাহিড়ী, সুরেশচন্দ্র তালুকদার, অজিতকুমার দত্ত এবং ফরাৎ আলী। এঁদের মধ্যে সুধাংশুশেখর এবং সুরজিৎ চন্দ্র উজ্জ্বলা মজুমদার, মধুসূদন ব্যানার্জি ও সুকুমার ঘোষের হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে লড়াই করেন। কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেবার সময় এঁদের লিখিতভাবে প্রশংসা করেন।  

১৯৩৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ছিল ভবানী ভট্টাচার্যের ফাঁসির তারিখ। রেখেছিল তাকে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে। অন্যদিকে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের রুদ্ধকক্ষে আবদ্ধ উজ্জ্বলা মজুমদার। দুর্গম পথের সহযাত্রী, বন্ধু ও সতীর্থ ভবানীর কথা তার বিনিদ্র রজনীতে বার বার মনে পড়েছে। সে-রাতের স্মৃতিকাহিনী উজ্জ্বলা প্রায় এক যুগ পরে নিজেই লিখেছিলেন “তারপর রাজশাহী জেলের এক অসহ্য রাত।… দূরান্তের অপর এক জেলে বসে শুনি, রাত্রির গভীরে কিশোর বন্ধুর কণ্ঠে তুলে দিয়েছে ফাঁসির। রজ্জু বিদেশী শাসক। মুহূর্তে ধুলায় গড়িয়েছে তার সোনার শরীর। সে দুঃসহ রজনীর ব্যথাবিধুর ইতিহাস জীবনে ভুলবার নয়। কিন্তু তারও মধ্যে ছিল এক পরম বাণী। সারারাত সেই বাণীকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম ভবানীরই কণ্ঠে বারে বারে শোনা রবীন্দ্রনাথের একটি গানে—

‘কাঁপিবে না ক্লান্ত কর
টুটিবে না বীণা,
নবীন প্রভাত লাগি।
দীর্ঘ রাত্রি রব জাগি
দীপ নিবিবে না। ”

তারপর বাংলাদেশের নানা জেলে কেটে গেল উজ্জ্বলার বন্দীজীবনের পাঁচটি বছর। অবশেষে মহাত্মা গান্ধীর প্রচেষ্টায় অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে ঢাকা জেল থেকে ১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসে উজ্জ্বলা মজুমদার মুক্তি পান। চলে আসেন তিনি কলিকাতায়। ১৯৪২ সালে আরম্ভ হয় শেষ জাতীয় সংগ্রাম ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে উজ্জ্বলা পুনরায় গ্রেপ্তার হন। পুলিস তাকে নিরাপত্তা আইনে বন্দী করে রেখে দেয় প্রেসিডেন্সি জেলে। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মুক্তি পান।

সমাজসেবার কাজে যুক্ততা

মুক্তির পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠনে অগ্রসর হন। নোয়াখালিতে দাঙ্গা হয়ে যাবার পর সেখানে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে গিয়ে তিনি সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৭ সালে এলো স্বাধীনতা। তখন শরৎচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। জেলের মধ্যে তিনি বি. এ. এবং মুক্তির পর বি.টি.পাস করেন। বারাসাতে রাজাহাট থানার অনুন্নত শ্রেণী অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে পল্লী নিকেতন নামে একটি প্রতিষ্ঠান তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে সংগঠন করেন এবং এই সমিতির মধ্য দিয়ে তিনি সমাজসেবার কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। উজ্জ্বলা রক্ষিত রায় মারা যান ১৯৯২ সালের ২৫ এপ্রিল।

তথ্যসূত্র:

১. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯। কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ১৩৯-১৪৩। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!