আমার দেখা একজন সার্থক নারীর নাম হচ্ছে প্রয়াত শাহেরা খাতুন। তিনি আমার খুব আপন জন ছিলেন, তাঁকে আমি নানী বলে ডাকতাম। তাঁকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, আর তার কথা শুনেছি। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর থানাধীন দামোল গ্রামে বসবাস করতেন।
যদিও যখন তার স্বামী মারা যান, তখন তার ছোট ছেলেটি কেবল স্কুলে পড়ে, কিন্তু তিনি ছেলে মেয়েকে সার্থকভাবে গড়ে তুলতে কখনো পিছপা হননি। যার ফলশ্রুতিতে আজ দুই ছেলে ও ছেলের বউ বিসিএস ক্যাডার। এই সার্থকতার পেছনে তাঁকে অনেক শ্রম, অর্থ ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে।
আজ থেকে ঠিক দেড় বছর আগে তিনি আমার বাসায় আসেন; আমাদের সাথে সময় কাটান এবং তার জীবনের নানা গল্প করেন। কিন্তু আজ তিনি নাই আছে, শুধু তার স্মৃতিগুলো যা আমি হয়ত ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হলো আজকের পরিচিত একটি পরিবার।
শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে সেইসব নারীদের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজে না খেয়ে না পরে ছেলে ও মেয়েদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে তিনি একজন। তাই আমরা বলতে পারি তিনি সার্থক নারী এবং তিনি একজন সার্থক মা যার শ্রম বৃথা যায়নি।
আমার মনে পড়ে তিনি আমার প্রতিষ্ঠানে এসে খুব খুশি হয়েছিলেন আর বলেছিলেন পরিশ্রম করো সফল হবে। আজও তাঁর সেই কথা বারবার মনে পড়ে। হয়তো তিনি আজ নেই, কিন্তু আছে তার কথাগুলো যা বারবার আমার মনে দোলা দেয়।
ছেলে-মেয়েদের জন্য তিনি অনেক ছাড় দিয়েছেন, কাউকে কখনো নিজের কষ্ট বুঝতে দেননি, বারবার বলে বেড়াননি তাদের জন্য কতটা করেছেন। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীদের সাথে ছিল তার খুব ভালো সম্পর্ক। ঢাকায় এসে খুব বেশিদিন থাকতে পারতেন না। চলে যেতেন তাদের টানে গ্রামে। সেই সম্পর্কগুলো আজও তাকে স্মরণীয় করে রাখবে।
যদি আমরা দশজন সার্থক নারীর তালিকা তৈরি করি তার নামটা হয়তো প্রথম দিকেই থাকবে। তার আতিথেয়তা ছিল অসাধারণ। খুব সহজেই অন্যের মন জয় করতে পারতেন। আজ হয়তো তিনি আমাদের মাঝে নেই কিন্তু রয়ে গেছে তার কর্মগুলো। তাকে নিয়ে অল্প সময়ে তেমন কিছু লিখা যাবে না, শুধু এতটুকু বলতে পারি আমার দেখা সার্থক নারীদের মধ্যে তিনি একজন। দোয়া করি পরপারে যেন তিনি ভাল থাকেন।
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।