সমীরণ মজুমদার পশ্চিমবঙ্গের বিপ্লবীধারার লেখক, সমাজ বিশ্লেষক, মুক্তচিন্তা চর্চা আন্দোলনের খ্যাতিমান সংগঠক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কল্পবিজ্ঞান, ব্যঙ্গ রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। বাংলাদেশের লেখিকা হেনা সুলতানার সঙ্গে তাঁর কবিতা গ্রন্থ দুই পাড় এক নদী এবং গল্পগ্রন্থ হেনা-সমীরণের গল্প যুগপৎ ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
সমীরণ মজুমদারের জন্ম কলকাতায় ১৯৪৩ সালে। বাল্যকাল কেটেছে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায়। পরে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার কৃষ্ণনগরে।
তিনি বিজ্ঞানে ডিস্টিংসনে স্নাতক অর্জন করেন। কলা ও আইনে স্নাতক। কর্মজীবন শুরু শিক্ষকতা দিয়ে, প্রথমে শক্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয়, তারপর বারাসত সরকারী বিদ্যালয় এবং পরে আইন পড়ার সুযোগের জন্য কলকাতার সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। আইন পাশ করে এ্যাডভোকেট হলেও বিশেষ কারণে আদালতে প্রবেশ ঘটে নি। এরপর টেলিফোনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কলকাতা টেলিফোনে জুনিয়র টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়র হিসাবে কাজ শুরু করেন। রাজনীতির কারণে বদলী এড়াতে পরবর্তী সময়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াতে যোগদান করেন।
ছাত্রাবস্থায় কৃষ্ণনগরে তরুণ তরুণীদের নিয়ে সমাজ-রাজনীতি আলোচনার জন্য ‘যুব ইউনিট’ গড়ে তোলেন। পরে সি.পি.এম দলে যোগদান করেন। তারও পরে নকশাল আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। পরিশেষে ‘গণফ্রন্ট’ গঠনে অংশগ্রহণ করেন। তারপর স্বতন্ত্র চিন্তায় ‘কমিউনিস্ট লিগ’ গঠন করেন।
সাংস্কৃতিক কাজের আগ্রহের কারণে ছাত্রাবস্থায় হাতে লেখা পত্রিকা ও পরে ‘স্পন্দন’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক সুত্রে ক্ষেতমজুর, গণফ্রন্ট, পূর্বতরঙ্গ ও আন্দোলনের দিশা প্রভৃতিতে লেখা প্রকাশ করেন। পত্রিকার সম্পাদনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে বিযুক্ত হবার পর নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় যুক্ত থেকেছেন – সামাজিক সংস্থা উদয়ন এবং প্রকাশনা সংস্থা কসমোস্ক্রিপ্ট, আশীর্বাদ, নান্দীমুখ সংসদ ইত্যাদি। মুক্তচিন্তা আন্দোলনে অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ, নান্দীমুখ সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন। বেশ কিছুদিন সদস্য এ.পি.ডি আর, কোটনিস মেমরিয়াল কমিটি, কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আর্ট কালচার অ্যান্ড সায়েন্স প্রভৃতি। মুক্তচিন্তা বিষয়ক কথা সাময়িকীর সম্পাদক, দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকার সাম্মানিক কলাম লেখক ছিলেন।
জীবনের এ্যাডভেঞ্চারে হিমালয়ের অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প, এভারেস্ট বেসক্যাম্প, হর কি দুন প্রভৃতি ট্রেকিং এবং বিশ্বপরিচয়ে পিরামিড, নায়েগ্রা, ফুজিয়ামা, চীনের প্রাচীর, মৃত সাগর, আঙ্করভাট প্রভৃতি দেখতে পাঁচটি মহাদেশ ভ্রমণ করেছেন।
সমীরণ মজুমদার রচিত গবেষণামূলক গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব, মার্কসবাদ বাস্তবে ও মননে, সামাজিক বিভাজনের রূপরেখা, দানিকের বিভ্রান্তি, মার্কসবাদ ও পেরেস্ত্রৈকা, মানব সমাজে ধর্ম, মুক্তজীবনের সন্ধানে: দিশা, জৈবনিক: চার্বাক নচিকেতার সংলাপ, ধর্ম জিজ্ঞাসুর প্রশ্ন শতক প্রভৃতি। তাঁর অনুদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে আরজ আলী মাতুব্বর ও আহমদ শরীফের রচনাংশ সংকলন, আইনস্টন ও রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা, রবীন্দ্র কাব্য উদ্ধৃতি, ইউনেস্কো বক্তৃতা: তসলিমা নাসরিন, ধর্ম: মানবতাবাদীর চোখে সাম্যবাদীর চোখে, মানবতাবাদী ইস্তেহার ইত্যাদি।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমীরণ মজুমদার রচিত তথ্য বিশ্লেষণে চীনের সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব গ্রন্থটি ২০১০ সালে বাংলাদেশ সংস্করণ প্রকাশিত হলে মার্কসবাদী রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজ গবেষকদের কাছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলাদেশে লেখক সমীরণ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুরাগি রয়েছে।
লেখক ও প্রাবন্ধিক সমীরণ মজুমদার ২৬ মে, ২০২২ তারিখে মারা গিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রোস্টেট ক্যান্সারের আক্রান্ত ছিলেন। কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।
লেখাটা ভাল হয়েছে। তাঁর বিশাল কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।