সক্রেটিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের ভাববাদী দার্শনিক

সক্রেটিস বা সক্রেতিস (ইংরেজি: Socrates) ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের ভাববাদী দার্শনিক। তিনি ছিলেন এথেন্স নগর রাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি নিজে কিছু রচনা করেন নি। তাঁর দর্শন এবং জীবনকাহিনী জানা যায় তাঁর বিখ্যাত শিষ্য প্লেটোর রচনাবলী থেকে। প্লেটো সংলাপের আকারে তাঁর সমস্ত দার্শনিক পুস্তক রচনা করেন।

প্লেটোর সকল গ্রন্থেরই নায়ক হচ্ছেন সক্রেটিস। সক্রেটিস পথে ঘাটে বাজারে সর্বদা তত্ত্বকথার আলোচনা করতেন। প্রচলিত বিশ্বাস, ধ্যান ধারণা কোনো কিছুকেই তিনি বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করতেন না। তিনি ছিলেন জ্ঞানের অন্বেষক। তাঁর জনপ্রিয়তা এবং প্রচলিত ধর্ম এবং নীতি সম্পর্কে তরুণদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার প্রবণতায় আতঙ্কিত হয়ে এথেন্স সরকার তাঁকে তরুণদের বিপথগামী করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

সক্রেটিস ক্ষমা প্রার্থনা করে রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে আর প্রশ্ন তুলবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে; অন্যথায় তাঁকে হেমলক পান করে মৃত্যুবরণ করতে হবে-এথেন্স নগরের আদালত এই দন্ড ঘোষণা করে। তাঁর শিষ্যগণ তাঁকে গোপনে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও সক্রেটিস ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা গোপনে পলায়ন করে জীবনরক্ষা কোনোটিকেই গ্রহণ করলেন না, হেমলক পান করে অকম্পিত চিত্তে মৃত্যুকে বরণ করেন। তাঁর জীবনের এই উপাখ্যান প্লেটোর গ্রন্থসমূহ থেকে পাওয়া যায়। তাঁর জীবনত্যাগের এই কাহিনী তাঁকে পৃথিবীর ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।

সক্রেটিসকে লোকে অনেক জ্ঞানী বলতেন। এই খ্যাতির বিশ্লেষণে তিনি পরিহাস করে বলেছিলনঃ আমাকে কেন লোকে জ্ঞানী বলে, আমি কতটুকু জানি, এই প্রশ্নের রহস্যভেদ করার জন্য আমি কতমানুষকে প্রশ্ন করেছি। যাকে প্রশ্ন করেছি, সেই –ই অক্লেশে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। দিনের পরিভ্রমণ শেষে আমি ক্লান্ত দেহে সিদ্ধান্ত নিয়েছি : এতসব ‘জ্ঞানীর’ মাঝে আমার যদি কিছু পার্থক্য থাকে তবে সে এই যে, আমি জানি যে আমি কিছু জানি না; কিন্তু এরা জানে না যে এরা কিছু জানে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বুঝা যায় – তিনি মানুষের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ মনে করতেন।

বিশ্বের মূল সত্তা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে না। মানুষ কেবল সেই সত্তার সৃষ্ট ভাবকেই জানতে পারে। ভাব মানুষের মনের ব্যাপার। সক্রেটিসের পূর্বে গ্রিসের দর্শন ছিল প্রধানত বস্তুবাদী এবং প্রকৃতিবাদী। সক্রেটিস এবং প্লেটোর দর্শন মূলত ভাববাদী। সক্রেটিস এবং প্লেটোর কাছে ভাবই হচ্ছে সত্য। মানুষ ভাবের সঙ্গে পরিচিত হয়। মানুষের মনের ভাব চরম ভাবের প্রকাশ।

তথ্যসূত্র

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৩৬৬-৬৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!