শামসুল ফয়েজ বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক

শামসুল ফয়েজ (ইংরেজি: Shamsul Foyej জন্ম : ১৮ জানুয়ারি, ১৯৫৩) বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য বিশ্লেষক। সত্তর দশকের কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তীব্র বাস্তবতাবোধ, নাগরিক বৈদগ্ধ এবং প্রখর রাজনৈতিক সাম্যবাদী জীবনাকাঙ্খা তারঁ কবিতার প্রধান উপাদান। নাগরিক পরজীবী উচ্চবিত্ত ও অস্থির মধ্যবিত্ত শ্রেণির যান্ত্রিক আচরণ তার মধ্যে দ্রোহের জন্ম দেয়। তিনি লিখেছেন মূলত শ্রমিক ও কৃষক জনগণের জন্য একগুচ্ছ কাব্যগ্রন্থ।

কবি শামসুল ফয়েজের শব্দ চয়নে নিজস্বতা আছে, তীক্ষ্ণ ধারালো ব্যঙ্গ শব্দ ও বাক্যরীতির মাধ্যমে তিনি আঘাত করেছেন সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদকে। জনগণের, মূলত শ্রমিক আর কৃষকের শ্রমের ভাষা দিয়েই দিয়েই তিনি তৈরি করেন তার কবিতার বাস্তব ছুরিকা। তাঁর দারুণ রাজনৈতিক একটি ছড়া নির্বাচন বিষয়ক; যেই ছড়ায় ভোটপ্রিয় ভুয়া-গণতান্ত্রিক নেতার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। নেতারা ভোটের আগে পাবলিককে বাজান ডাকে কিন্তু ভোট গেলে ডাকে হালা বা হালার পুত। বাংলাদেশের ছোট ছোট শহরগুলোতে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করে, মধ্যবিত্তের সবচেয়ে অগ্রসর অংশটি যে বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা লালন করেন তা এরকম বিভিন্ন মানুষের চেষ্টার ফল।

শামসুল ফয়েজের সাহিত্যচর্চা

শামসুল ফয়েজের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে শামসুল ফয়েজের কবিতা (কাব্য সংকলন, ১৯৯৭), শোণিতে বিবিধ কোরাস (জুন ২০০৮), সময়ের ধ্রুপদ (২০০৮), মনে চায় শুক্কুর পাগলা হয়ে যাই (ডিসেম্বর ২০১১)। তিনি এই চারটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও আরো অনেক অগ্রন্থিত কবিতা লিখেছেন।

শামসুল ফয়েজ অনেকের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। অনুবাদে সিদ্ধহস্ত কবি শামসুল ফয়েজ ইংরেজি, ফরাসি, উর্দু, হিন্দি ও নেপালী ভাষা থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অনুবাদ করেছেন এবং সেসব অনুবাদ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষভাবে বাংলাদেশে সমসাময়িক বাংলা কবিতা ও গল্পের অনুবাদ করছেন। ২০১১ সালে কবি শামসুল ফয়েজ বাংলাদেশের কবি মহাদেব সাহার নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করেন।

শামসুল ফয়েজের জন্ম ও শৈশব

শামসুল ফয়েজের জন্ম ১৮ জানুয়ারি, ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া জুবিলী কোয়ার্টারের মাতুল বাড়ি মোজাহিদী লজে। তার পিতার নাম আবুল খায়ের মুহাম্মদ। তার পিতা ১৯৪৭ সালের আগেই বৃটিশ আর্মিতে কর্মরত ছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৪ সনে অবসর নেন। তার মাতার নাম সালেহা খাতুন।

শিক্ষা ও পেশাগত জীবন

শামসুল ফয়েজ ১৯৬৯ সালে নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হোন। ১৯৭২ সালে নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৭৯ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮১ সালে বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে এম.এ. ডিগ্রী লাভ।

১৯৮১ সালে ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় অধুনালুপ্ত দৈনিক দেশ ও মাসিক বসুন্ধরাতে কিছুকাল সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এই সময় মিরপুরে শাহ আলী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে ময়মনসিংহে এসে ভালুকা কলেজে যোগ দেন। সেই সময়ে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আহমদবাড়ি কলেজ প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হন। সেই সাথে নজরুল সেনা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।

ইউটিউবে দেখুন শামসুল ফয়েজের ১ জুন ২০১৫ তারিখের আলোচনা

কবিতা সুর সন্ধ্যায় শামসুল ফয়েজের আলোচনা

শামসুল ফয়েজ ১৯৮৪ সালে ময়মনসিংহ জালাল উদ্দীন পাঠাগারে সফলভাবে ফার্সি ভাষার কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকাস্থ Alliance France-এ সফলভাবে ফরাসি ভাষার কোর্স শেষ করেন। তিনি সর্বশেষ রাঘকপুর সিনিয়র মাদরাসার বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

বিশ শতকের আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শামসুল ফয়েজ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলাপ্রধান হিসেবে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির তরফ থেকে তাকে ময়মনসিংহ সদর ও নান্দাইলে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হয়।

গত ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪ এই মানুষটির বয়স ৬২ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাঁকে ৬৩তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে তাঁর গুণগ্রাহীগণ শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বিকাল পাঁচটায় ময়মনসিংহ শহরের ছোটবাজারের গ্রিনলিফ এসোসিয়েটস প্রাঙ্গণে।

তথ্যসূত্র

১. অনুপ সাদি, ৯ জুলাই ২০২০, “শামসুল ফয়েজ বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল: https://www.roddure.com/biography/shamsul-foyej/

Leave a Comment

error: Content is protected !!