উত্তরবাংলার সংগীত ও কারু শিল্পী, প্রকৃতিপ্রেমী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাতারু, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী এবং পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী শাহেরা খাতুন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত বুধবার, ২ জুন বিকেল ৪ টায় তিনি ৮৪ বছর বয়সে রাণীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যু বরণ করেন।
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালদহ জেলার রতুয়া থানার মাঠিয়ারি গ্রামে শাহেরা খাতুন ১৯৩৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। নদীবেষ্টিত অঞ্চলে বেড়ে ওঠার কারণে তিনি সাতারু হিসেবে অবিভক্ত মালদহ ও অবিভক্ত দিনাজপুর জেলায় সুনাম অর্জন করেন।
শৈশবকালেই শাহেরা খাতুন বিভিন্ন মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েলী গীত গাওয়া শুরু করেন। তিনি প্রায় শতাধিক গান মুখস্থ করেছিলেন এবং বিবাহ ও গায়ে হলুদের সময় এসব গীত গাইতেন। গ্রামে গ্রামে উত্তরবাংলার মেয়েলী গীত ও লোকসংগীত প্রচার ও জনপ্রিয়করণে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
এছাড়াও জীবিতকালে তিনি বীজ সংরক্ষণ, উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ ও পরিবেশ আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ফলজ, বনজ ও ঔষধি উদ্ভিদ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। অনেক উদ্ভিদের ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে মুখে মুখে তথ্য ও ব্যবহার সংক্রান্ত পদ্ধতি বলে দিতে পারতেন।
শাহেরা খাতুন মালদহ জেলার খাবারকে ঠাকুরগাঁও জেলায় জনপ্রিয়করণে বিভিন্ন কাজ করেছেন। চারুশিল্পে দক্ষ এই শিল্পী বিভিন্ন ধরনের কাঁথা ও সুজনী সেলাই করতে পারতেন। প্রায় সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আগ্রহ সহকারে কাঁথা ও সুজনি সেলাই করেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের তরুণীদেরকে কাঁথা ও সুজনি সেলাইয়ে আগ্রহী করেছেন।
১৯৪৮ সালে মো. সাবের আলীর সংগে বিবাহসূত্রে ও স্বামীর কাজকর্মে যুক্ত হয়ে তিনি গান গাইতে এবং স্বামীর লাঠি খেলার সহযোগী হিসেবে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে মালদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কিষণগঞ্জ, কাটিহার ও অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় দেশ ভাগের পূর্বে ও পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
শাহেরা খাতুনের পরিবার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার কারণে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবিরাম সহযোগিতা করে গেছেন। সন্তানদের সাথে সামাজিক রাজনৈতিক কাজে তিনি ময়মনসিংহে বেশ কয়েকবার জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০০৩ সাল থেকে ২০২০ সালের ভেতরে বহুবার ঢাকা, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর অঞ্চলে ঘুরেছেন এবং গণমানুষের সাথে কথা বলেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যার জননী। তিনি লেখক প্রাবন্ধিক অনুপ সাদি ও লেখক আবদুল ওদুদের মা।
বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে ফুলকিবাজের সঙ্গে রয়েছেন ফুলকিবাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঞ্চলের শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গ। তারা দেশ ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদেরকে প্রতিবেদন ও সংবাদ প্রদান করলে আমরা সেগুলোকে প্রকাশ করে থাকি।