শফিকুল কাদির একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, অধ্যাপক ও প্রকৃতিপ্রেমী

অধ্যাপক শফিকুল কাদির (ইংরেজি: Shafiqul Kadir) একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, অধ্যাপক, প্রকৃতিপ্রেমী এবং রাজনৈতিক অনুসারী। তিনি তার জমিতে শত প্রজাতির উদ্ভিদের একটি বাগান করেছেন। এক সময় অর্ঘ্য নামে একটি ছোট কাগজ সম্পাদনা করতেন।  

গত পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখে তার গ্রাম গফরগাঁওয়ের কুকসাইরে গিয়ে দেখি তিনি শাহাদত হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছেন। সেই মেলার একপাশে জিলাপি ভাজা হচ্ছে, শিশুদের খেলনা, চকলেট, বাতাসা বিক্রি হচ্ছে, এমনকি অন্যপাশে কয়েকটি গাছ পর্যন্ত বিক্রির জন্যে রাখা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিশুদের নানান প্রতিযোগিতার আয়োজনে ব্যস্ত। বিকেলের দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত হয়ে দেখি তিনি একটি সেমিনারের আয়োজন করেছেন। সেই সেমিনারের প্রবন্ধ উপস্থাপন করলেন তিনিই; আমি এবং আরেকজন আলোচক। পহেলা বৈশাখকে গ্রাম দিবস ঘোষণা করার জন্য তিনি প্রবন্ধে নানান যুক্তি উপস্থাপন করলেন। আমারও মনে হলো শত দিবসের ভিড়ে আমাদের একটি গ্রাম দিবস থাকলে মন্দ হতো না।

আমাদের কত কত দিবস আছে। গ্রামের মানুষদের সুখ-দুঃখের কথা স্মরণ করার জন্যে তো একটি দিবস থাকতেই পারে। সেইদিন আমরা গ্রামের মানুষদের কথা ভাবব, তাদের কথা শুনবো, তাদের জ্বালা-যন্ত্রণার ভাগিদার হবো। গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর করার প্রক্রিয়া বের করার জন্য একটি দিন ব্যয় করলে হয়ত সমাধান হবে না, তবে সেই একটি দিন গ্রামকে নিয়ে ভাবা যেতে পারে। গ্রামকে নিয়ে আমরা যত বেশি ভাবব গ্রাম আমাদের কাছে তত শক্তিশালী হয়ে ধরা দেবে।

এই গ্রাম দিবসের কথা ভেবেছেন যে মানুষটি তার নাম শফিকুল কাদির। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে ২০০৭ সালে। প্রকৃতি-অন্তপ্রাণ এই মানুষটি নানা রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন দীর্ঘদিন। তিনি একসময় ‘অর্ঘ্য’ নামে একটি ছোটকাগজ সম্পাদনা করতেন। কান্দিপাড়া আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করে যে অর্থ পান তা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করেই তার দিন-মাস-বছর কাটতে থাকে।

শফিকুল কাদির নিজ গ্রামে ‘গ্রাম সাহিত্য কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেই সাহিত্য কেন্দ্রে রয়েছে হাজারের বেশি বই, পুরনো পত্রিকা, বেশ কিছু ঐতিহাসিক আলোকচিত্র। গ্রামের মানুষকে জ্ঞান-গরিমায় শিক্ষিত করা তার ব্রত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার উদ্ভিদপ্রীতি দেখে আগ্রহী হয়ে বাড়ির পাশে বছর চারেক আগে থেকে শুরু করেছেন বিপন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর কাজ। আজ তার সেই বাগানে ২০০ প্রজাতি ছাড়িয়ে গেছে। এই গণতান্ত্রিক মানুষটি কাজ করে চলেছেন হাজারো মানুষের জন্য। তাঁর কর্মময় জীবন দীর্ঘ হোক এই কামনা করি।

সেমিনারে অনুপ সাদির বক্তৃতাটি দেখুন ইউটিউবে

আলোচনা করছেন লেখক অনুপ সাদি

আমি বহুবার ভেবেছি, গ্রামীণ জনগণের শক্তিকে সামাজিক-বৈপ্লবিক শক্তিতে পরিণত করতে হবে। গ্রামের জনগণকে, বিশেষ করে কৃষককে শহুরে শ্রমিকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সত্যিই আমাদের একটি গ্রাম দিবস দরকার। তবে দিবসগুলোকে যেভাবে কর্পোরেট পুঁজি গ্রাস করছে তাতে একটি নতুন দিবস যুক্ত হলে গ্রামকে শোষণ করার প্রক্রিয়া বাড়তেই পারে। তবে গ্রামে গ্রাম দিবস উদযাপিত হলে গ্রামে পুঁজির লেনদেন বাড়বে; যদিও আমরা সাম্যবাদীরা পুঁজির শাসনের উৎখাত চাই। গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হতে পারে কেবল পুঁজির শাসন উৎখাতের মাধ্যমেই।

Leave a Comment

error: Content is protected !!