নির্মলা রায় পরাধীন ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে থেকে কাজ করতেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য জেলে যান; মুক্তির পড়ে কাজে ধরণ পাল্টান। তখন ছাত্র ছাড়াও খেটেতে খাওয়া মানুষদের নিয়ে কাজ করেন।
নির্মলা রায়-এর শৈশব ও পরিবার
নির্মলা রায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ফরিদপুর জেলার উলপুর গ্রামে। নির্মল রায় ও সুষমা রায় দুই ভগ্নী। তাদের পিতার নাম মনোরঞ্জন রায়। ১৯৪৫ সালে ভবেশচন্দ্র সান্যালের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। পিতা যদিও গ্রামের একজন জমিদার ছিলেন কিন্তু তিনি বিপ্লবী দলের সভ্য ছিলেন এবং বিপ্লবী কর্মের জন্য তাঁকে দৌলতপুর কলেজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শিক্ষাজীবন
পরিবার থেকে রাজনৈতিক জ্ঞান পেয়েছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজ করতেন। নির্মলা রায় ১৯৩৭ সালে বি.এ. পাস করেন এবং কলিকাতায় আসেন। তারপরে আবার কাজ শুরু করেন।
ইউটিউবে দেখুন আমার লেনিন তথ্যচিত্র
রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ
বিদেশী শাসকদের হাতে পিতার বন্দীজীবনের নির্যাতনের কাহিনী তিনি ছোট বেলা থেকে জ্ঞান হওয়া অবধি শুনছেন এবং তাঁদের মন বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে উঠত। মায়ের কাছে পিতার কথা শুনে, তার উদার আদর্শের প্রতি তারা আকৃষ্ট হতেন। আর একটু বড়ো হয়ে চোখের সামনে প্রজাদের প্রতি পিতার স্নেহ ও উদার আচরণে তারা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। ভাবতেন বড়ো হয়ে ওদের দুঃখকষ্ট দূর না করতে পারলে জীবনের সার্থকতাই নেই।
নির্মলা রায়-এর সাংগঠনিক কাজে যুক্ততা
১৯৩৮ সালে তিনি বিপ্লবী নেতা রমেশ আচার্য ও প্রতুল গাঙ্গুলীর সংস্পর্শে এসে আর.এস.পি. দলের সভ্য হন। তিনি ছাত্রী-সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ‘নিখিল বঙ্গ ছাত্র ফেডারেশন’-এর ছাত্রী-সাব-কমিটির সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৪০ সালে বারাণসীতে ‘নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন’-এর বার্ষিক সম্মেলনের কার্যকরী সমিতির তিনি সভ্য নির্বাচিত হন। ছাত্রসমাজের মধ্যে কাজ করতে করতে তিনি ১৯৪২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হন এবং নিরাপত্তাবন্দীরূপে তিন বৎসর প্রেসিডেন্সি জেলে আটক থাকেন। তার গানের ঝরনা জেলখানার অন্যান্য বন্দিনীদের কাছে এক বিশেষ সম্পদ ছিল। ১৯৪৫ সালে মুক্তিলাভের পরেও তিনি ছাত্রসমাজের মধ্যে পূর্বের ন্যায় কাজ করতে থাকেন। উত্তর কলিকাতার নানা বস্তীতে তিনি নিরক্ষরতা দূর করবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন।
আরো পড়ুন
- শান্তিসুধা ঘোষ ছিলেন যুগান্তর দলের বিপ্লবী
- শোভারানী দত্ত ছিলেন বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা
- সাবিত্রী দেবী ছিলেন যুগান্তর দলের বিপ্লবী
- মায়া ঘোষ ছিলেন বিপ্লবী দলের নেত্রী
- বিমলপ্রতিভা দেবী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী
- বনলতা সেন (চক্রবর্তী) ছিলেন অনুশীলন সমিতির নেত্রী
- বনলতা দাশগুপ্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের তরুণ বিপ্লবী
- নির্মলা রায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন বিপ্লবী
- সুষমা রায় ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মী
- ছায়া গুহ ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিপ্লবী নেত্রী
- কমলা দাশগুপ্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলের বিপ্লবী নেতৃত্ব
- কমলা চট্টোপাধ্যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী
- ঊষা মুখার্জী ছিলেন অনুশীলন দলের বিপ্লবী
- পারুল মুখার্জী ছিলেন অনুশীলন দলের বিপ্লবী
- উমা সেন ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী নারী বিপ্লবী
তথ্যসূত্র:
১. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯। কলকাতা: র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ২২৪-২২৫। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।