আমার বড় বোন শাহেরা খাতুন ছিলেন সাংসারিক কাজে খুব পারদর্শী

আমার বড় বোন শাহেরা খাতুন ছিলেন পাঁচ ভাই ও চার বোনের ভেতরে দ্বিতীয়। ভাইবোনদের ধারাবাহিকতায় প্রথমে আছেন বড় ভাই মোহাম্মদ মুসা আলী। এরপর জন্ম হয় শাহেরা খাতুনের। এরপর জন্ম হয়েছে যথাক্রমে আয়েশ আলী, নেকজান বেগম এবং আমজাদ আলীর। বাংলাদেশে আসার পরে জন্ম হয়েছে আমার। আমার পরে জন্মেছে দাউদ হোসেন, জোহরা খাতুন এবং বিলকিস আরা।

আমার বাংলাদেশে জন্ম হলেও আমি বেশ কয়েকবার মাঠিয়ারি গ্রামে গেছি। সেই গ্রামে বাড়ি ছিল মাটির দেওয়াল দিয়ে তৈরি। কৃষিকাজের ভেতরে সবচেয়ে বেশি চাষ হতো বোরো ধান আর জয়া ধান। মাষকলাই আর খেসারির ডালের আবাদ ছিল। পাটের আবাদও দেখেছি।

গ্রামের ফেরিঅলারা জিনিস পাতি নিয়ে আসত, গ্রামে দোকান ছিল, পাশের সামসি হাট সবচেয়ে বড় হাট আছিল। এলাকার সব রাস্তাই কাঁচা ছিল। আমি গিয়ে হাজী আবদূর রউফের বাড়িতে থেকেছি, পাকিস্তান হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ওই বাড়ির এবং গ্রামের সাথে যোগাযোগ ছিল।

ছোটবেলায় শাহেরা খাতুনের বাড়িতে কলের গান ছিল, সেই থালার মতো মেশিনে আমি অনেক সময় গান শুনেছি। ওদের অবস্থা বেশ কিছুদিন খুব ভাল ছিল। শাহেরা খাতুনের শাশুড়ি খুব সরল ছিলেন, আমাকে খুব আদর করতেন। তাদের বাড়ির চতুর্দিকে সব সময় বড় বড় বাগান দেখেছি, সব সময় অনেক গাছপালা ঘেরা বড় বাড়ি দেখেছি।

আমার বড় বোন শাহেরা খাতুন আগে খুব পান খেত। আম গাছে গাছি পান লেগে থাকত। আমি পান পেড়ে পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। পরে তিনি পান খাওয়া ছেড়ে দেন। কখনোই আমার বোন দুধ খেতে পারত না। বোনেরা আসলে বাড়িতে ভাল খাওয়া দাওয়া বান্নাবাড়া হতো। 

আমি বড় হবার পরে দেখেছি, যখন শাহেরার শাশুড়ি মারা গেল, তার পরে পরিবারটি এক সময় পৃথক হয়ে যায়। শাহেরা ছেলেমেয়েগুলার কয়েকজন অল্প বয়সেই অসুস্থ হয়ে মারা যায়। পরে কিছুদিন অভাবের ভেতরে পড়ে যায়। সংসারে টান পড়লে আমাদের বাড়ি থেকে অনেক কিছু নিয়ে যেত।

আমাদের কাঁঠালের গাছ ছিল, বোনের পরিবারটা পৃথক হবার পরে ওদের ভাগে কাঁঠাল গাছ পড়েনি। আমি টুকরিতে তিন চারটা করে কাঁঠাল নিয়ে মাথায় করে কয়েক বছর কাঁঠাল নিয়ে গেছি। তখন আমার বয়স হবে ১২ বা ১৩ বছর।

আমার দুলাভাই সাবের আলী দায়িত্বশীল ছিলেন না, শাহেরাই সংসারটা চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে বাড়িতে ঝগড়া হয়েছে কিনা আমরা দেখেনি, এমনকি রাগ করে আমার বোন কখনো আমাদের বাড়িতে আসেনি।

শাহেরা খাতুনের ভালো সম্পর্ক ছিল আয়েশ আলীর সঙ্গে, দুজনের বয়সে বেশি পার্থক্য ছিল না, তাই ভাল সম্পর্ক ছিল। শাহেরা গল্প করতে পছন্দ করতেন, কিন্তু আমার সঙ্গে তেমন কোনো গল্প হয়নি।

মারা যাওয়ার আগের দিন আমার ছেলে কালাম, আমি আর ভোলা গেছিলাম দেখতে। আমাদের মাফ দেয়া-নেয়া হয়। আমার বোন বলেছিল, আমি কালকে রক্ত দিতে রাণীশংকৈল যাচ্ছি। রক্ত দিলেই ১০০% ভালো হয়ে যাব, এরকম নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু সেই রক্তদানটাই কাল হয়েছিল।

Leave a Comment

error: Content is protected !!