আমার মনে পড়ে বড় ফুপু শাহেরা খাতুন দেখতে লম্বা, ফর্সা, স্বাস্থ্যবান, সাদা সাদা কোকড়ানো চুলের একজন অসীম সাহসী মানুষ ছিলেন। আমার মায়ের কাছে শুনেছি, আমার ফুপু খুব পরিশ্রমী ছিলেন। ফুপার চেয়ে ফুপুর সাহস ছিল খুব বেশি। তিনি একা একা সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। আমাদের চৌরঙ্গীর বাসায় মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পর একা চলে আসতেন।
আমার বড় ফুপু অনেক রকমের পিঠা বানাতে এবং খেতে ভালবাসতেন, যেমন চিতই পিঠা, তেল পিঠা, ছাতুর লাড়ুসহ আরো হরেক রকমের বিচিত্র ধরনের পিঠা। ছাতুর লাড়ুগুলো ক্রিকেট বলের আকার ধারণ করত এবং সেগুলো অনেকদিন রেখে দিলে খুব শক্ত হয়ে যেত। এই লাড়ুগুলো খেতে গেলে বিশেষ রকমের ঝাল আর মসলার ঘ্রাণ পাওয়া যেত। তিনি খুব ভালো কালাই ও চাল-কালাইয়ের রুটি বানাতে পারতেন।
ফুপু ফলমূলের গাছ লাগাতেন বেশি এবং ফলমূল খেতে পছন্দ করতেন। ফুপুর বাসার পেছনে অনেক বরই গাছ ছিল। বরই পাকার মৌসুমে আমরা অনেকগুলো বরই নিয়ে আসতাম। বরই ও আমের আচার বানাতে পারতেন, আমচুর, আমতি বা আমসত্ব বানাতে জানতেন। ফুপু আমাদের আতা আর ডালিম ফল খেতে দিতেন। অনেক রকমের গাছের বাগান সব সময়েই বাড়ির সাথে দেখেছি।
ফুপু অনেক সুন্দর নকসা তুলে নকশি কাঁথা সেলাই করতেন। কাঁথাগুলো দশ পনের বছরেও পুরনো হতো না। ফুপু অনেক গল্প জানতেন এবং সবাইকে গল্প কেসসা শোনাতেন।
আমার বড় ফুপু গ্রামের বিয়ে বাড়িতে গীত গাইতেন এবং গীতের সঙ্গে নাচতেও পারতেন। মায়ের কাছে শুনেছি, কারো বিয়ে লাগলে তিনি বাসায় থাকতেন না। সব বোনদেরকে নিয়ে বিয়ের বাড়িতে নাচতে গাইতে চলে যেতেন। সবাইকে নিয়ে উৎসবের দিনে খুব সহজেই আনন্দ করতে জানতেন।
আমাদের বাড়িতে আসলে আমার বড় ফুপু পিঠা সঙ্গে নিয়ে আসতেন। বেশিরভাগ সময়ে আনতেন আন্ধাসা বা ঘোরা চিতাই পিঠা। আব্বু এসব পিঠা খেতে পছন্দ করতেন। এছাড়াও আমার বড় বোনের ছেলে ফুপুকে ‘পিঠা নানু’ বলে সম্বোধন করত। আমার আব্বু ফুপুর সঙ্গেই পরিবারের গল্পগুলো করত, পুরনো অতীতের গল্পগুলো আব্বু ফুপুর কাছেই শুনতেন। আমার আব্বুও ফুপুকে খুব ভালোবাসতেন, ফুপুও আব্বুকে খুব ভালবাসতেন। আব্বু ফুপুকে সব সময় সম্মান করতেন এবং সময় পেলেই দেখতে যেতেন।
ফুলকিবাজ ডট কমে অতিথি লেখক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কলাম, অনুবাদ, নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লেখায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন পূরবী সম্মানিত, ইভান অরক্ষিত, রনো সরকার, দিল আফরোজ, অনাবিলা অনা এবং রণজিৎ মল্লিক। এছাড়াও আরো অনেকের লেখা এখানে প্রকাশ করা হয়।