কাজী সালাহ উদ্দিন মুকুল বা মুকুল সারথি (? – ০২ জুন ২০১৮) ছিলেন বিপ্লবী রাজনীতিবিদ, লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী ও সাম্যবাদী আন্দোলনের গঠক। তিনি ময়মনসিংহের মার্কসীয় পাঠচক্রের সদস্য এবং বিভিন্ন স্মরণ ও উদযাপন কমিটির সভাপতি, সদস্য সচিবসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শেষ জীবনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এবং বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
সালাহ উদ্দিন মুকুল সারা জীবন গণমানুষের বিপ্লবী আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলেন। তিনি প্রগতিশীল কবিও ছিলেন। কাজী সালাহ উদ্দীন মুকুল কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিক জীবন শুরু করেন।
২০১৭ সালের দিকে তিনি পারিবারিক প্রয়োজনে অবস্থান পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলে যান। এরপরও তিনি ময়মনসিংহের রাজনীতির খোঁজখবর রাখতেন। রাজনৈতিকভাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকলেও অন্যান্য সমাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদী ও বামপন্থী দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের এই পার্থক্যটুকু ছাড়া তার চলাফেরায় দ্বিমত করার মত তেমন কিছু ছিল না। ময়মনসিংহে বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি তার দরদ, যত্নশীলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক অবস্থানে তিনি ছিলেন বয়স্ক মুরুব্বির মতো সবার প্রিয়।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, বাসদ-মাকর্সবাদী, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্দ্রিক বিপ্লবী পার্টি, ময়মনসিংহ জেলার পক্ষ থেকে কমরেড সালাহ উদ্দিন মুকুলের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি প্রদান করা হয়। প্রয়াত নেতার সহধর্মিনী, সন্তান ও পরিবার-পরিজনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানায় বিভিন্ন সংগঠন ও নেতা কর্মীরা।
ময়মনসিংহে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ২৫ নভেম্বর ২০১৭ বিকেলে স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ২০ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি কমরেড এম এ মতিন, ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন, মওলানা ভাসানী, কার্ল মার্কস, ভি আই লেনিন, জোসেফ স্তালিন, মাও সেতুংসহ অন্যান্য সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতাদের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতি বা সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কাজী সালাহ উদ্দিন মুকুল নিজের নামকে সামান্য বদলে নিয়ে কাজী মুকুল সারথি নামে কবিতা লিখতেন। ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ আবদুল মতিনকে নিয়ে লিখেছিলে কবিতা “চির ভাস্বর তুমি ভাষা মতিন”
পতাকায় পতাকায় ফুলে ফুলে
শোভিত তোমার মরদেহ-
মিছিলে মিছিলে এগিয়ে গেল চির কল্যাণে
তোমারই সৃষ্টি শহিদ মিনারে সমবেত প্রতিটি মুষ্টিবদ্ধ হাত,
অনন্ত গগনে রাইফেলের শব্দের মতো গর্জে উঠলো
দুনিয়ার মজদুর এক হও।
চির অম্লান চির ভাস্বর হয়ে থাকবে বলেই কি!
তোমাকে সমাহিত করা হয়নি
শাদা কাফনের ঘরে।
কালের চাকায় যতই ঘুরবে সময়
শানিত হবে উত্তরাধিকারের চেতনা
রাজনীতির অদ্ভুত কৌশলী খেলায়
বর্তমান সময়ের জারজবৃত্ত ভেঙে
তুমি নষ্ট হওনি
তুমি ভ্রষ্ট হওনি
দ্রোহে বিদ্রোহে ছিলে তুমি সজাগ সৈনিক।
কমরেড কাজী সালাহ উদ্দিন মুকুল গত ০২ জুন ২০১৮ তারিখে চিরবিদায় নিয়েছেন। তিনি রাজধানী ঢাকা’র বারডেম হাসপাতালে বিকেল তিনটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রয়াত কমরেড স্মরণে ০৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় মালগুদামস্থ ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কার্যালয়ে কমরেড কাজী সালাহ্ উদ্দিন মুকুলের স্মরণে শোকসভা আয়োজক কমিটি একটি শোকসভার আয়োজন করে। তাঁর মৃত্যুতে শ্লোগান ওঠে, কমরেড মুকুল – লাল সালাম!! মুক্তমনা, সরল, বিনয়ী এই প্রিয় মানুষটিকে স্মরণ থাকবে চিরকাল।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।