কার্ল মার্কস বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ মহান বিপ্লবী ও দার্শনিক

কার্ল মার্কস (ইংরেজি: Karl Marx; ৫ মে, ১৮১৮ – ১৪ মার্চ, ১৮৮৩) ছিলেন জার্মানির বৈপ্লবিক সমাজতান্ত্রিক সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির প্রতিথযশা তাত্ত্বিক। এছাড়াও তিনি ছিলেন মার্কস ছিলেন একজন জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সাংবাদিক এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ এবং দ্বন্দ্বমূলক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ঊনবিংশ শতকের শ্রমিক শ্রেণির সাম্যবাদী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মার্কস ছিলেন ইতিহাসে বিখ্যাত।[১]

তিনি প্রুশিয়ার রাইল ল্যান্ড প্রদেশের ট্রিভ্স নামক স্থানে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা Hersehel Marx ছিলেন একজন ইহুদী এবং তাঁর মাতা হেনরিয়েটা মার্কস ইংল্যান্ডের অধিবাসী এবং অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মহিলা ছিলেন। জন্মসূত্রে তাঁদের পরিবার ছিল ইহুদী ধর্মাবলম্বী। কিন্তু ১৮২৪ সালের দিকে মার্কস-এর বয়স যখন ছয় বছর তখন তাঁর পরিবার খ্রিস্টান (প্রটোস্ট্যান্ট) ধর্মে দীক্ষিত হয়। তাঁর পিতা তখন নিজের নাম পরিবর্তন করে হার্সেল মার্কস নাম গ্রহণ করেন।

মার্কসের পিতা ছিলেন একজন নাম ডাকওয়ালা আইনজীবী। আর্থিক দিক থেকে তাঁদের পরিবার ছিল বেশ স্বচ্ছল। তৎকালীন জার্মানির অনেক বিখ্যাত ও ক্ষমতাসম্পন্ন লোকের সাথে মার্কসের পিতার ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। স্বভাবের দিক থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদার। ভলটেয়ার প্রমুখ বিপ্লবী লেখকদের প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। তাই মার্কসকেও তিনি সংস্কারমুক্ত প্রগতিশীল মননে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

মার্কস স্থানীয় গ্রামার স্কুল থেকে বাল্যশিক্ষা শেষে বন-এ আইন এবং বার্লিনে দর্শন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের আগে ১৮৩১ সালে পরলোকগত হেগেলের ধ্যানধারণার প্রতি অতিমাত্রায় আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। ইয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিকিউরাস এবং ডেমোক্রিটাসের উপর সন্দর্ভ লিখে কার্ল মার্কস ১৮৪১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থাতে মার্কস ফ্রিডরিখ হেগেলের দর্শনের প্রভাবে এলেও হেগেলের দর্শনের বামপন্থী ও প্রগতিশীল ভাবসমূহই মার্কসকে অধিকতর আকৃষ্ট করে। হেগেলের অনুসারীদের মধ্যে তিনি বামপন্থী হেগেলবাদী নামে পরিচিত। পরবর্তীতে মার্কস ক্রমান্বয়ে যত প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে নিজেকে লিপ্ত করে তোলেন তত বেশী তিনি হেগেলের ভাববাদী প্রভাব কাটিয়ে উঠতে থাকেন। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে জার্মানীর অর্থনীতির অবস্থা সম্পূর্ণরূপে তার প্রত্যক্ষ জ্ঞান এবং ফয়েরবাখের বস্তুবাদী দর্শনের সঙ্গে তার পরিচয় মার্কসকে পরিপূর্ণভাবে হেগেলের দর্শনের আওতার বাইরে টেনে আনে। তিনি এই সময় থেকে তীব্রভাবে হেগেলের দর্শনের বৈপরীত্য, তার আভ্যন্তরীণ অসঙ্গতি, বাস্তব অবস্থার সঙ্গে তার ভাব-ব্যাখ্যার বিরোধ ইত্যাদি সম্পর্কে মার্কস তার বিরোধী অভিমত ব্যাখ্যা করতে থাকেন।[৩] মার্কস তৎকালীন জার্মানির এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমস্যা সমাধান কল্পে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর জোর দেন।[২]

মার্কস ছিলেন প্রকৃতিগতভাবে অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর গৃহ শিক্ষকই তাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বড় হয়ে তিনি বিখ্যাত কেউ হবেন। মার্কস-এর এই ভাগ্যবান শিক্ষকের ভবিষ্যদ্বাণী যে সত্য হয়েছিল তা আর বলার অবকাশ রাখে না। ছোটবেলা থেকে গণিত, ধর্মতত্ত্ব ও ভৌত বিজ্ঞানের প্রতি তিনি আকর্ষণ বোধ করতেন। ছোটবেলায় তিনি এসব সম্পর্কে বেশ জ্ঞানার্জনের সুযোগও পেয়েছিলেন। এ সকল বিষয় ছাড়াও অন্য আর একটি বিষয়ে মার্কস এর প্রবল আকর্ষণ ছিল তা হলো সাহিত্য। এমনকি কবিতা লেখার অভ্যাসও তাঁকে পেয়ে বসে। তবে তাঁর পিতার উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্নতর ছিল। তিনি তাঁর ছেলেকে তাঁর মতো একজন আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। মার্কস তাই পিতার ইচ্ছানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইন নিয়ে পড়ালেখাও করেছিলেন।

মার্কস বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। প্রথমে তিনি বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর পরে জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার প্রথম দিক থেকেই তিনি ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় বিশেষ অনুরাগী হয়ে ওঠেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি দার্শনিক গবেষণায় আত্মনিয়োগ করবেন। জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন অধ্যয়ন শুরু করেন। দর্শনে মার্কস-এর অনুরাগ জন্মায় হেগেলের দর্শন থেকে। কিন্তু অচিরেই তিনি হেগেলীয় ভাববাদী মতাদর্শের বদলে বস্তুবাদী চিন্তার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এবং প্রাচীন গ্রিক পরমাণুবাদী দার্শনিক ডেমোক্রিটাস এবং এপিকিউরীয় দর্শনের উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর।

ছাত্রজীবনের শেষ দিকে এসে মার্কস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি অধ্যাপনা করবেন। তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রী নেওয়ার পিছনেও তাঁর এ মানসিকতা কার্যকর ছিল। কিন্তু তিনি বহু চেষ্টা করেও যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজে চাকুরি পেলেন না তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সাংবাদিকতা করবেন। এখানে একটি কথা অবশ্য উল্লেখ করা দরকার তা হলো দর্শনের পঠন পাঠনের মাধ্যমে তিনি রাজনীতির প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। দার্শনিক জ্ঞান তাকে সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, সর্বোপরি সমাজের সামগ্রিক অবকাঠামো সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন করে তোলে।

১৮৪৮ সালেরা জার্মানিতে কৃষক এবং শ্রমিকের যে বিপ্লবাত্মক অভ্যুত্থান ঘটে তাতে এবং পরবর্তীকালে প্যারিস শহরের শ্রেণী সংগ্রামে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মার্কস পরিপূর্ণরূপে সাম্যবাদী নেতায় পরিণত হন। এই সময়ে মার্কসবাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কসের কর্মজীবনের একনিষ্ঠ সাথী ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস মার্কস এর সঙ্গে এসে মিলিত হন। মার্কস এবং এঙ্গেলস উভয়ই মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর গভীর গবেষণার মাধ্যমে এক নতুন বিশ্বদর্শন প্রতিষ্ঠা করেন।[৩]

মার্কস সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন, চিন্তা করতে থাকেন সুন্দর, সুষম একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার। তাই তিনি ভাবলেন সাংবাদিক হলে সমাজের অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যাবে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মার্কস কলোন থেকে প্রকাশিত একটি প্রগতিশীল পত্রিকার সাথে যুক্ত হন। এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রুগে। ঐ পত্রিকায় মার্কস তৎকালীন জার্মান সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন এবং শাসকদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। কিন্তু তৎকালীন জার্মান সরকার একে তাদের স্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনা করে এই পত্রিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

মার্কস এক পর্যায়ে উক্ত পত্রিকার সম্পাদকসহ ফ্রান্সে চলে যান। তিনি প্যারিসে বসবাস করতে থাকেন এবং প্যারিস থেকে প্রকাশিত ‘ফ্রাঙ্কো জার্মানি ইয়ারবুক’ নামক পত্রিকায় কাজ করেন। এসময় তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ প্রাপ্তি ঘটে। এই সম্পদ অন্যকিছু নয় আর এক মহান মনীষী ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস। এঙ্গেলসের সাথে তাঁর বেশ সখ্যতা হয় এবং মার্কস পেয়ে যান তাঁর মতাদর্শের একজন যোগ্য অংশীদার।

যাই হোক, জার্মানির সরকার বিরোধী লেখালেখির জন্য ফ্রান্সে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের কারণে মার্কসকে ফ্রান্স ছাড়তে হয়। এর পরে তিনি ব্রাসেলস-এ চলে যান এবং একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন যার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যাবে, মতামত প্রকাশ করা যাবে এবং সর্বোপরি তাঁর বিপ্লবী মতাদর্শ দ্বারা সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। তাই মার্কস ব্রাসেলস্ এ বসে এঙ্গেলসকে নিয়ে এই নতুন দলের গঠনতন্ত্র লিখে ফেলেন। এটিই হচ্ছে মার্কসবাদের বিখ্যাত গ্রন্থ The Communist Manifesto যা ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।[২] ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ মার্কসবাদের অন্যতম মৌলিক দলিল বিশেষ। এই ইশতেহারের মধ্যে অত্যন্ত জোরালো ভাষায় তীক্ষ্মভাবে ইতিহাসের দ্বন্ধমূলক বিকাশের তত্ত্ব বিবৃত করে ঊনবিংশ শতকের ইউরোপের শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদের গর্ভে নতুন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অনিবার্য্য শক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[৩]

এর কিছুদিন পরে তিনি আবার তাঁর মাতৃভূমি জার্মানিতে চলে আসেন এবং তাঁর ধারণা হয় যে, সরকার পতন হবে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ফল উল্টো হয়েছিল, মার্কসকেই বরং জেলে যেতে হয়েছিল। জেল থেকে মুক্তি পাবার পর তিনি আবার ফ্রান্সে চলে যান, কিন্তু এবারও তিনি সেখানে বেশি দিন থাকার সুযোগ পেলেন না। ফ্রান্স সরকার তাঁকে সে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন। এভাবে স্বদেশ বিদেশ করতে করতে মার্কস যখন হাঁপিয়ে উঠছিলেন তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন তিনি ইংল্যান্ডেই স্থায়ী হবেন। সেখানে তিনি অন্তত নিরাপদে থাকতে পারবেন। কেননা, তৎকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর রাজনৈতিক পলাতকরা ইংল্যান্ডে বেশ যত্নেই লালিত হতো। এজন্য ইংলন্ডকে বলা হতো ‘বিতাড়িতদের মাতৃভূমি’ (Mothers of Exiles)। মার্কস ইংল্যান্ড চলে এলেন।

ইংল্যান্ডে এসে তিনি প্রচণ্ডভাবে পড়ালেখায় ডুবে পড়েন। অধিকাংশ সময় কাটাতেন British Musium – এ; এছাড়া London School of Economics এর সাথেও তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন। অতিরিক্ত পড়ালেখার কারণে তিনি সাংসারিক দিক থেকে বেশ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যান। মার্কস এর পিতার কাছ থেকে কোনো সাহায্যই তিনি পান নি। কেননা, মার্কস এর বিয়ের ব্যাপারে তাঁর পরিবারের অমত ছিল। তিনি তাঁর পিতৃবন্ধু ওয়েস্টফ্যালনের কন্যা জেনীফোনকে বিবাহ করেছিলেন। জেনীর সাথে তাঁর বিবাহপূর্ব পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জেনীর পিতা ছোটবেলা থেকে মার্কসকে ভীষণ পছন্দ করতেন এবং মার্কস এর মনন বিকাশে জেনীর পিতার ভূমিকা ছিল অনেক বেশি। এজন্য মার্কস তার ডক্টরেট থিসিস পেপার যখন প্রকাশ করেন তখন তা জেনীর পিতা ওয়েস্টফ্যালেন এর নামেই উৎসর্গ করেছিলেন।

কিন্তু মার্কস যখন ক্রমশ বিপ্লবী হয়ে উঠলেন তখন ওয়েস্টফ্যালেন তাঁকে আর আগের মতো পছন্দ করতে পারছিলেন না। মার্কসকে তিনি পুরোপুরি একটা বিপজ্জনক ছেলে মনে করতেন। তাই এমন ছেলের সাথে স্বাভাবিক কারণেই নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে চাননি। অগত্যা মার্কস জেনী নিজেরাই বিয়ে করে ফেলেছিলেন। আর এ ঘটনার পর থেকে তাঁরা কার্যত উভয় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এভাবে পরিবার, রাষ্ট্র, পেশা সবকিছু থেকে বিছিন্ন হয়ে মার্কস, ইংল্যান্ডে নিদারুণ দারিদ্র্যে দিনাতিপাত করতে থাকেন। প্রচণ্ড পরিশ্রমে তাঁর শরীরও একেবারে ভেঙে গিয়েছিল। তাছাড়া এসময় তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ পুঁজি (ইংরেজি: Das Capital) লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

এই সময় এঙ্গেলস ছাড়া অন্য কেউ তাঁকে কোনো প্রকার সাহায্য করেন নি। অবশ্য মার্কসও তখন সর্বমহলে তেমন কোনো পরিচয়ও সৃষ্টি করতে পারেন নি। যাই হোক, এঙ্গেলসও ১৮৫০ সালে ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলেন। কিন্তু থাকতেন মার্কসের বাসা থেকে অনেক দূরে। মার্কস ছিলেন লন্ডনে আর এঙ্গেলস থাকতেন ম্যাঞ্চেস্টারে। তবুও এত দূরত্ব অতিক্রম করে এঙ্গেলস প্রায়ই এসে মার্কস এর দেখাশুনা করতেন এবং আর্থিক সাহায্য করতেন। এক পর্যায়ে মার্কস বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এঙ্গেলস প্রায়ই আসতেন। কিন্তু ১৮৮৩ সালের ১৪ই মার্চ দুপুরে তিনি তাঁকে দেখতে এসে দেখলেন এই মাত্রই সব শেষ হয়ে গেছে। এক নিদারুণ বেদনাভরা মনে মার্কস এর মৃতদেহের কাছে দাঁড়িয়ে লন্ডনের মিটল্যান্ড পার্ক রোডের বাড়িতে সেদিনের উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে এঙ্গেলস বলেন: “পৃথিবীর এই বিশাল লোকসংখ্যার মধ্য থেকে একজন মাত্র কমে গেল; কিন্তু এই একজনই ছিল এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।”

মার্কসের দর্শনের ঐতিহাসিক প্রকাশ ঘটেছে ঊনবিংশ শতকের ইউরোপীয় সমাজের অর্থনীতিক ও সামাজিক অবস্থার উপর রচিত তাঁর গভীর গবেষণামূলক ‘দি ক্যাপিটাল’ বা পুঁজি নামক গ্রন্থে। এই গ্রন্থের প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খন্ড প্রকাশ করেন এঙ্গেলস মার্কসের মৃত্যুর পরে যথাক্রমে ১৮৮৫ এবং ১৮৯৪ সালে। ভারতবর্ষের সামাজিক বিকাশ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভারত শোষণের স্বরূপ এবং ১৮৫৭ সালের সিপাহী যুদ্ধের তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করে মার্কস আমেরিকার একটি সাময়িক পত্রে যে প্রবন্ধরাজি প্রকাশ করেন মার্কসের গভীর জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টির স্মারক হিসেবে তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য্যও অপরিসীম।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. অনুপ সাদি, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, “কার্ল মার্কস বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান বিপ্লবী”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএল: https://www.roddure.com/biography/life-of-marx/
২. মো. আবদুলওদুদ (দ্বিতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ২০১৪)। রাষ্ট্রদর্শন। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৪৭৯-৪৮১।
৩. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৭৬-২৭৭।

রচনাকাল: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, নেত্রকোনা বাংলাদেশ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!