কল্যাণী দাস ছিলেন যুগান্তর দলের বিপ্লবী নেত্রী ও লেখক

কল্যাণী দাস (ভট্টাচার্য) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী। তিনি পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছিলেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই রাজনৈতিক নানা কাজের সাথে যুক্ত থাকতেন। তিনি মুলত যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত  ছিলেন। লেখালেখি করার কারনে বিভিন্ন সময় নানা মুখপত্রের দায়িত্ব পালন করতেন।[১]

জন্ম ও পরিবার:

১৯০৭ সালের ২৮শে মে তারিখে কল্যাণী দাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন কটকে। তার পিতা বেণীমাধব দাস, মাতা সবল দাস, ছোট ভগ্নী বীণা দাস। তাদের  পিতৃভূমি  ছিল চট্টগ্রাম। দুই বোন কল্যাণী ও বীণার জীবনে গভীর প্রভাব ছিল তাঁদের পিতামাতার এবং বড়মামা অধ্যাপক বিনয়েন্দ্রনাথ সেনেব।

পিতামাতার নিকট থেকেই শুনতেন তার বড়মামার মহৎ চবিত্রকথা। পিতার কাছ থেকে কল্যাণী ও বীণা ছোটবেলায় বসে বসে শুনতেন সমাজ বিপ্লবীদেব জীবনী। একটা আদর্শের জন্য মানুষ যে কত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে সেসব কথা শুনে শুনে বিপ্লবী রাজনীতির দিকে আকৃষ্ট হন।

পিতার ছিলেন নিঃস্বার্থ কর্মপ্রবল ব্যক্তি। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে তিনি জানতেন না। কটকে র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল যে, তিনি স্কুলে রাজদ্রোহ প্রচার করেন। ফলে বদলি হন তিনি কৃষ্ণনগরে।

নেতাজী সুভাষচন্দ্রের চরিত্বের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঐ আদর্শ শিক্ষক বেণীমাধব দাসের ছাত্ররূপে কটকের স্কুলেই । মায়ের ছিল সংগঠনী শক্তি। দুস্থ নারীদের জন্য ‘পুণ্যাশ্রম’ তার একার চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল। ভাই বিনয়েন্দ্রনাথ সেনের প্রতিষ্ঠিত নীতি-বিদ্যালয় তিনি বহুদিন পরিচালনা করেন। জাতির চরিত্রগঠনের কাজে সে-যুগের নীতিবিদ্যালয়-এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী ।

এমন পিতামাতার সান্নিধ্যে কল্যাণী দাস ও বীণা দাস যতই বড় হতে লাগলেন ততই পরাধীনতার গ্লানি তাদের গভীর পীড়া দিতে থাকে। তারা গতানুগতিক জীবনে আর সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি।

কল্যাণী দাস-এর শিক্ষাজীবন:

কল্যাণী দাসের ছিল মায়ের মতোই সংগঠনী ক্ষমতা। ১৯২৮ সালে বি.এ. পাস করবার পর তিনি ইউনিভার্সিটিতে এম.এ. পড়তে যান। ঐ ১৯২৮ সালেই কল্যাণী দাস তার সহপাঠী ও বন্ধু সুরমা মিত্র, কমল দাশগুপ্ত প্রভৃতির সহযোগিতায় ‘ছাত্রীস সংঘ’ সংগঠন করেন। এর সভানেত্রী ছিলেন সুরমা মিত্র, সম্পাদিকা কল্যাণী দাস।

কলিকাতার স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে এই ‘ছাত্রীসংঘ’ গঠিত হয়। তখনকার দিনে ছাত্রীদের মধ্যে অত বড় সংঘ বোধহয় আর ছিল না। প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার, বীণা দাস, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, ইলা সেন, সুলতা কর, কমল দাশগুপ্ত প্রভৃতি পরবর্তী দিনের রাজনৈতিক কর্মীগণ এই ‘ছাত্রীসংঘ’র সক্রিয় সদস্য দিলেন।

‘যুগান্তর-দলে’র বিশিষ্ট বিপ্লবী কর্মী দীনেশ মজুমদার এই ‘ছাত্রীসংঘ’র মেয়েদের লাঠি ও ছোরা খেলা শিক্ষা দিতেন। পরে দীনেশ মজুমদারের বিপ্লবী কাজের জন্য ফাসী হয়ে যায় । ‘ছাত্রীসংঘ’র পক্ষ থেকে পাঠচক্র, সঁতার-শিক্ষা, সাইকেল চড়া শিক্ষা, ফাস্টএইড শিক্ষা প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক কাজ:

রাজনীতির দিক থেকে এই সংঘের প্রভাব ছিল গভীর ও ব্যাপক। ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্রীদের যোগদান করবার আহ্বান জানালেন কল্যাণী দাস ও তার সহকর্মিগণ। তারা যখন বেথুন কলেজ বন্ধ করার জন্য কলেজ-গেটে পিকেটিং আরম্ভ করেন তখন দলে দলে ছাত্রীরা এসে পিকেটিং-এ যোগ দেন। এখানে পিকেটিং করবার সময় একদিন পুলিস তাঁদের একদলকে গ্রেপ্তার করে একটা ভ্যানে তুলে নিয়ে শহরের বাইরে একটা ভাঙা বাড়ীতে ছেড়ে দিয়ে আসে। সেই নির্জন স্থান থেকে হেঁটে ফিরে এসে দাঁড়ালেন তারা আবার সেই বেথুন কলেজ গেটের সামনে। অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের সামনে পেয়ে অন্যান্য ছাত্রীরা মহা উল্লাসে সমম্বরে ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি করে উঠলেন।

একদিন তারা বেথুন কলেজে পিকেটিং করছিলেন এমন সময় ইলা সেন নামে বেথুন কলেজের একটি ছাত্রী পিকেটার এসে খবর দিলেন যে, প্রেসিডেন্সি কলেজ গেটে ছাত্র-পিকেটারদের উপর নাকি গুলিচালনা করা হবে। তৎক্ষণাৎ কল্যাণী দাস ও তার একদল সাথী বেথুন কলেজ গেট থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজ গেটে চলে গেলেন। ছাত্র-পিকেটারদের ঘিরে দাড়িয়ে তার পিকেটিং করতে লাগলেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে যখন পিকেটিং ভেঙে দিতে পারলো না তখন ছাত্রদের উপর আর গুলি করা আর সম্ভব হলো না।

১৯৩০ সালে ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’র পক্ষ থেকে কল্যাণী দাস ও অন্যান্য কর্মিগণ শোভাত্রায় যোগ দিয়ে বড়বাজারে বিলিতী কাপড়ের দোকানের সামনে পিকেটিং করতেন।

১৯৩২ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময় তিনি হাজরা পার্কে একটি বে-আইনী সভা অনুস্থিত করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং আটমাসের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩২ সালের শেষে তিনি মুক্তি পান।

জুলহাউসি স্কোয়ার বোমার মামলায় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়ে আসেন ১৯৩২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। কল্যাণী দাস জেল থেকে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে এবার বিপ্লবী কাজে যুক্ত হলেন। এই সময় বহু পুরুষ ও মহিলা বিপ্লবী কর্মী কারার অন্তরালে বন্দী ছিলেন। পরিচালকহীন ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যারা বাইরে ছিলেন তাঁদের অনেককে একত্রিত করে পুনর্গঠন ও কর্মপরিচালনার ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হন। দীনেশ মজুমদার কল্যাণী দাস পুনর্গঠন করতে থাকেন মেয়েদের।

দীনেশ মজুমদার প্রভৃতি পলাতকদের যোগাযোগ রক্ষার ব্যবস্থা করা, পুলিসের দৃষ্টি থেকে বে-আইনী জিনিস গোপন রাখা প্রভৃতি দায়িত্বপূর্ণ কাজে কল্যাণী দাসের সঙ্গে অন্যান্য বিপ্লবী মেয়েরাও এগিয়ে এলেন। এই মহিলাকর্মীদের মধ্যে ছিলেন সুলতা কর, আভা দে, সুহাসিনী দত্ত, শান্তিসুধা ঘোষ, প্রভাতনলিনী দেবী, লীলা কালে, সুতপা দেবী, অমিয়া দেবী প্রভৃতি।

দীনেশ মজুমদার তখন কলিকাতায় অথবা পুরুলিয়ার দিকে নানা স্থানে অথবা চন্দননগরে পলাতক হয়ে ফিরছিলেন। একবার তিনি ঝরিয়ার কয়লার খনির মজুর সেজেও কাজ করেছিলেন। চন্দননগরে থাকাকালে ১৯৩৩ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি তারিখে পশ্চাতে ধাবমান ফরাসী পুলিস-কমিশনার কুইসসকে গুলি করে নিহত করেন এবং  ছুটে পালিয়েছিলেন তিনি গঙ্গার দিকে। সেখানে কৌপীন পরে গাঁজাখোর সাধুদের সঙ্গে পাড়ে পৌছে আশ্রয় নিয়েছেন একটা ঘোড়ার আস্তাবলে। ঘোড়ার দানা খেয়েই ৩ থেকে ৪ দিন কাটিয়ে অবশেষে কলিকাতার বন্ধুদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ স্থাপন করতে সমর্থ হন। তখন বিপ্লবী বন্ধু নারায়ণ ব্যানার্জী তার স্ত্রীকে নিয়ে এসে কর্নওয়ালিস স্ট্রীটে একটি বাড়ী ভাড়া করে সেখানে আশ্রয় দিলেন দীনেশ মজুমদারকে।

অর্থাভাব নগ্নমূর্তিতে দেখা দিলো। মহিলা কর্মিগণ নিজেদের কর্মের অবসরে গৃহশিক্ষকতার কাজ করে অর্থের অনটন থেকে বাচাতে চেষ্টা করতেন। ওদিকে পুলিস জানতে পারলেই গৃহকর্তাকে গিয়ে ভয় দেখিয়ে আসত। ফলে গৃহশিক্ষয়িত্রীর কাজও বন্ধ হয়ে যেতো।

বিপ্লবী কাজের জন্য বহু অর্থের তখন প্রয়োজন ছিল। দীনেশ মজুমদারের বন্ধু কানাই ব্যানার্জী ছিলেন গ্রীগুলে ব্যাঙ্কের কর্মচারী। ১৯৩৩ সালের এপ্রিল মাসে জাল সই দ্বারা উক্ত ব্যাঙ্ক থেকে সাতাশ হাজার টাকা তুলে আনা হয়। একমাত্র কানাই ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে এই সম্পর্কে মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ অভাবে তাকেও মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে রাজবন্দী করে জেলে আটক রাখা হয়।

পুলিশ এই সময় সন্দেহবশে বহু পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে থাকে। এই ব্যাপারে সন্দেহবশে গ্রেপ্তার হবার পর শাস্তিসুধা ঘোষ, প্রভাতনলিনী দেবী ও সুলত কর অন্তরীণ রইলেন। লীলা কামলে ছিলেন মারাঠী মেয়ে। তাকে বাংলাদেশের বাইরে বহিষ্কার (externed) করা।

দীনেশ মজুমদারের ছিল প্রগাঢ় আদর্শনিষ্ঠা ও দরদী প্রাণ। গ্রীণ্ডলে ব্যাঙ্কের টাকা হাতে থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কোনো প্রয়োজনে ওই টাকা খরচ করতে তিনি রাজী ছিলেন না—অসুস্থ হয়েও নয়। তিনি জানতেন এবারে গ্রেপ্তার হ’লে ফাঁসী তার অনিবার্য। তিনি ডালহাউসি স্কোয়ারে টেগার্টের উপর বোমা ফেলার অপরাধে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে দণ্ডিত বন্দী ছিলেন এবং সেই বন্দী অবস্থায় তিনি মেদিনীপুর জেল থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। তা ছাড়া ছিলেন কুইনস-হত্যা এবং গ্রীণ্ডলে ব্যাঙ্কের মামালার আসামী।

তিনি জানতেন পলাতক জীবনে গ্রেপ্তার করতে এলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে হয় সেখানেই মৃত্যুকে বরণ করবেন, না-হয় পরাজিত হলে ফাঁসীর দন্ডটি হাসিমুখে গলায় তুলে নেবেন। বাঁচিয়ে রাখা তাকে কোনোমতেই সম্ভব ছিল না। মৃত্যুপথযাত্রী দীনেশ নিজেকে কেবল নীরবে নিশ্চিহ্ন করে বিলিয়ে দিয়ে চলেছিলেন। অবশেষে সত্যই একদিন পুলিশ তাদের অবস্থান জানতে পারল। ১৯৩৩ সালের ২২ মে তারিখে কর্নওয়ালিস স্ত্রীটে বাড়তে পুলিশের সঙ্গে বেধেছিল তাদের যুদ্ধ।  যুদ্ধ করতে করতে হাতের সমস্ত গুলী যখন ফুবিয়ে গেল তখন দীনেশ ও তার সহকর্মিগণ আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়ে যান।

এতগুলি গুরত্বর মামলার অপরাধের জন্য বৃটিশের আইনে লেখা ছিল ফাঁসিই একমাত্র শাস্তি। দেশপ্রেম এবং মানবপ্রেম আদর্শের জন্য নতমস্তকে চরম শাস্তি গ্রহণ করে মানবজাতি সজল নয়নে স্মরণ করে সেই অমর মৃত্যুকে । দীনেশ মজুমদারের ফাঁসী হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ৯ই জুন গভীর রাত্রে। দীনেশ মজুমদার গ্রেপ্তার হবার কিছুদিন পরে কল্যাণী দাস গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৩ সালের শেষে তাকে হিজলী ও মেদিনীপুর জেলে রাজবন্দী করে রাখা হয । অসুস্থ অবস্থায় তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথমে মুক্তি পান।

কল্যাণী দাস-এর বিবাহ ও মুখপত্র:

১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে নির্মলেন্দু ভট্টাচাযেব সঙ্গে কল্যাণী দাসের বিবাহ হয়। ১৯৩৮ সালের এপ্রিল মাসে (বাংলা ১৩৪৫ সালের ১লা বৈশাখ) তিনি মহিলা রাজনৈতিক কর্মীদের মুখপত্র ‘মন্দির’ প্রকাশ কবেন। এই পত্রিকাতে তিনি নিজে সম্পাদিকার পদ গ্রহণ না করলেও, পত্রিকা প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভিক সমস্ত সংগঠনই তিনি করেন। শুধু ‘মন্দির’ পত্রিকা নয়, ১৯৩৮ সালে তিনি ‘ছাত্রীসংঘ’কেও পুনরুজ্জীবিত করেন।

এই সময় ছত্রীসংঘ ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন সুহাসিনী চ্যাটার্জী। প্রায় ৪০ বছর বয়সের কাছাকাছি এই মহিলার অদম্য সাহস, শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস দেখে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। গুহের শত অসুবিধা ও তাকে নিরুৎসাহ করতে পারেনি। দেশসেবার আকাঙ্ক্ষা ঘরের বৌকে বাইরে নিয়ে এল। তিনি নিজে সাইকেল চড়তে শিখে ছাত্রীদের শিক্ষা দিতে থাকেন। পাড়ার লোকে ছিঃ ছিঃ করে তাকে ঢিল ছুড়তে লাগল। নিন্দা তাঁকে তেজকে স্পর্শ করতেও পারেনি। তারই জয় হলো।

১৯৪০ সালে কল্যাণী ভট্টাচার্য বোম্বে চলে যান স্বামীর কর্মস্থলে। সেখান কার সিভিল লিবার্টি আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। সেই সময় বোম্বের আশিটি মহিলা-প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়ে যে যুক্ত সমিতি গঠিত হয় তার মধ্যে তিনি বিশিষ্ট অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যোগদান করে তিনি বোম্বেতে তিন মাসের জন্য কারাবরণ করেন।

মুক্তির পরে চলে আসেন তিনি কলিকাতায়। বাংলায় এসে পঞ্চাশের মন্বন্তরের যে শোচনীয় দৃশ্য তিনি দেখলেন তারপর আর স্থির থাকা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পরদুঃখকাতব হৃদয় তার উদ্বেলিত হয়ে উঠল। প্রায় একবছর তিনি বাংলাদেশের জেলাগুলিতে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। সেই সঙ্গে ‘বেঙ্গল রিলিফ কমিটি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যান্টি ডিজিজ বিভাগ খুলে দুর্ভিক্ষপীড়িত গ্রামগুলিতে বহু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

কেন্দ্রগুলিতে ডাক্তার, স্বেচ্ছাসেবক ও স্বেচ্ছাসেবিকাগণ সেবাকর্মে নিযুক্ত থাকতেন। সেখানে ঔষধ, বস্ত্র ও চাউল বিতরণ করা হ’ত। ‘জীবন অধ্যধন’ নামক অত্মচবিতে তিনি তার দরদী হৃদযের মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতাগুলি বর্ণনা করেছেন। অজিও সেবা, শিক্ষা প্রচার ও নানা গঠনমূলক কাজের মধ্যে নিজেকে তিনি ডুবিয়ে রেখেছেন।

তথ্যসূত্র:

১. দোলন প্রভা, ৫ আগস্ট, ২০১৯, “কল্যাণী দাস ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগান্তর দলের বিপ্লবী”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএলঃ https://www.roddure.com/biography/kalyani-das/

২. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯। কলকাতা: র‍্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ৮৯-৯৪। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0।

Leave a Comment

error: Content is protected !!