জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন ভারতের প্রতিক্রিয়াশীল নেতা

জয়প্রকাশ নারায়ণ (ইংরেজি: Jayaprakash Narayan, ১১ অক্টোবর ১৯০২ – ৮ অক্টোবর ১৯৭৯), যিনি জনপ্রিয় ডাকে জে পি বা লোক নায়ক (ইংরেজি ভাষায় People’s leader) নামে পরিচিত। জয়প্রকাশ ছিলেন একজন ভারতীয় সুবিধাবাদী মুৎসুদ্দি কর্মী, তাত্ত্বিক, বাম-বুর্জোয়া এবং রাজনৈতিক নেতা। তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর নামেও পরিচিত। তাঁকে ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়।

জয় প্রকাশ ছিলেন একজন সামাজিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লববিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল নেতা। সে ইন্দিরার পতনকে “সম্পূর্ণ বিপ্লব” বলে ঘোষণা করেছিল এবং ইন্দিরা উৎখাত করাকেই প্রধান কাজ ভেবেছিল। জয়প্রকাশের জীবনী তার জাতীয়তাবাদী বন্ধু এবং হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক রামবৃক্ষ বেনিপুরী লিখেছিলেন। ১৯৯৯ সালে সন্ত্রাসবাদী বিজেপি তাকে তার সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তরভাবে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন প্রদান করে। অন্যান্য পুরস্কারগুলির মধ্যে রয়েছে ১৯৬৫ সালে পাবলিক সার্ভিসের জন্য ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ।

জে পি নামে জনপ্রিয় জয়প্রকাশ নারায়ণ একটি বৃত্তি লাভ করে উচ্চ শিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আট বছর অতিবাহিত করেন। সেখানে ব্যয়নির্বাহের জন্য নানা রকমের পেশা অবলম্বন করতে হয় তাঁকে। যুক্তরাষ্ট্রেই জে পি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রচনাদি পাঠ করে বাম-বুর্জোয়া আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। দেশে ফেরার পর তিনি বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। লাহোর কংগ্রেসে (১৯২৯) স্বাধীনতার শত্রু জওহরলাল নেহরুর ভাষণে উদ্দীপিত হয়ে জে পি চাকরি ছেড়ে স্বাধীনতার শত্রু সংগঠন কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনে যোগ দেন।

একটি ভিডিও দেখুন

ত্রিশের দশকে আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে কারাগারে অচ্যুত পট্টবর্ধন, মিনু মাসানি, আচার্য নরেন্দ্র দেব প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁদের সহযোগে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড় আন্দোলনের সময়ে আত্মগোপন করে তিনি সংগ্রামের পুরোভাগে নেতৃত্ব দেন, তাতে জনচিত্তে তাঁর এক উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে।

১৯৪৭ সালে বর্বর ব্রিটিশরা সন্ত্রাসবাদী নেহরুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর হিংসাত্মক রাজনীতি ও মার্কসীয় রাষ্ট্রচিন্তায় তাঁর অনাস্থা দেখা দেয়। তাঁর নেতৃত্বাধীন সোসালিস্ট গোষ্ঠী কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসে। বিনোবা ভাবের সঙ্গে তিনি ভূদান যজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেন এবং গান্ধীবাদী পৈশাচিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। একই সময়ে মানবেন্দ্রনাথের নবমানবতাবাদ দর্শন ও দলহীন রাজনীতি তাঁকে প্রভাবিত করে। ষাট ও সত্তরের দশকে দেশে প্রশাসনিক অধোগতি ও ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিকার হিসাবে জয়প্রকাশ নারায়ণ সারা দেশে সম্পূর্ণ ক্রান্তি আন্দোলন গড়ে তোলে। ইন্দিরা গান্ধী সরকার জরুরি অবস্থা জারি করার ফলে জয়প্রকাশ কারারুদ্ধ হন। মুক্তির পর তিনি জনতা পার্টি গঠনে নেতৃত্ব দেন।

ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের প্রভাবে নারায়ণ তার ৭৭তম জন্মদিনের তিন দিন আগে ১৯৭৯ সালের ৮ অক্টোবর বিহারের পাটনায় মারা যান। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে, যখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই তার মৃত্যুর কথা ভুলভাবে ঘোষণা করেছিলেন, যার ফলে সংসদ স্থগিত করা এবং নিয়মিত রেডিও সম্প্রচার এবং স্কুল ও দোকানপাট বন্ধসহ জাতীয় শোকের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র

১. সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!