যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপধ্যায় বা নিরালম্ব স্বামী (ইংরেজি: Jatindra Nath Banerjee, ১৯ নভেম্বর, ১৮৭৭ – ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০) ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁকে ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের দীক্ষাগুরু বলা হয়। বিপ্লবী যদু গোপাল মুখোপাধ্যায় তাঁকে “অগ্নিযুগের ব্রহ্মা” নামে আখ্যায়িত করেন।
১৮৭৭ সালের ১৯ নভেম্বর বর্ধমান জেলার চান্না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিতা কালীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যশোহর আদালতের পেশকার ছিলেন ।
প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর যতীন্দ্রনাথ বর্ধমান কলেজে এফ.এ পড়েন। ১৯০০ সালে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এরপর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। অরবিন্দ তাঁকে একটি চিঠি দিয়ে কলকাতায় অনুশীলন সমিতির সরলা দেবীর কাছে পাঠান। ঐ সময় যতীন্দ্রনাথ অনুশীলন সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য হয়ে যান। এরপর ১৯০২ সালে আপার সার্কুলার রোডে তিনি একটি সমিতি স্থাপন করেন। সেটি প্রকৃতপক্ষে ছিল বিপ্লবীদের একটি আড্ডাস্থল। সেখানে বিপ্লবকর্মে প্রয়োজনীয় সকল কিছু শেখানো হতো। অরবিন্দ ঘোষ তখন বারোদায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ পাঠাতেন। কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে স্থাপিত সমিতিটি ছিল বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ের অন্যতম প্রধান বিপ্লবী পার্টি। এটি’র স্রষ্টা ছিলেন যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
১৯০৩ সালে অরবিন্দের ভাই বারীন ঘোষ অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন। এরপর যতীন ও বারীনের মধ্যে আদর্শবাদ ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত শুরু হয়। বারীনের সঙ্গে মতানৈক্যের ফলে যতীন সমিতি ত্যাগ করেন এবং কামাপুকুরে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক নতুন পার্টির সৃষ্টি করেন। বাঘা যতীন এখানে যোগ দেন।
১৯০৬ সালে যতীন্দ্রনাথ দেশ পর্যটনে বেরিয়ে উত্তর ভারত ভ্রমণ করেন। ঐ সময় তিনি আফগানিস্তানে যান এবং প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পাঞ্জাবে তিনি একটি দেশপ্রেমিক অনুরক্ত দলের সন্ধান পেয়েছিলেন। ঐ সময় হিমালয়ে তিনি ‘সোহং স্বামী’ নামে এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ পান। তার কাছে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং নাম নেন ‘নিরালম্ব স্বামী’।
এরপর তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করে বিপ্লবীদের সঙ্গে পুনরায় যোগসূত্র স্থাপন করেন। ১৯০৮ সালে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন। পরে প্রমাণাভাবে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ঐ সময় সন্ন্যাস নিলেও নিরালম্ব স্বামী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। বাঘা যতীন বিপ্লবী কাজে তার পরামর্শ নিতেন। তিনি ছিলেন বিপ্লবীদের বন্ধু, গুরু এবং পথপ্রদর্শক। বিপ্লববাদ ও রাজনৈতিক ডাকাতির বিরুদ্ধে থাকলেও বিপ্লবই ছিল তার মূলমন্ত্র। ১৯৩০ এর ৫ সেপ্টেম্বর তার জীবনাবসান হয়।
তথ্যসূত্র
১. জয়দুল হোসেন, অবিভক্ত বাংলার অসমাপ্ত বিপ্লব, গতিধারা, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩০৩-৩০৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।