জাগো বাহে, কোনঠে সবাই

এইচ কবির টিটো, সাংবাদিক ও লেখক

যাদের আমরা পাগল হিসাবে ভাবি বা পাগল হিসাবে দেখি, তাদের মধ্যে কিছু পাগল আছেন, তারা অন্যের জীবন, সমাজ সংসার দেশপ্রেমে নিজেকে প্রহরী বানিয়ে চলছেন বসুন্ধরায়। নিজে অপুষ্টির শিকার হয়ে, অন্যদের পুষ্টি বিতরণে কাজ করছেন এক অন্ধকারের বিরুদ্ধে। নিজের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন নয়, কিন্তু নিজের চেষ্টায় অন্যকে সমস্যামুক্ত করতে সক্ষম।

দোষ-গুণ মিলিয়েই তো মানুষ। আমরা কেউই এই সব দোষ কিংবা গুণ গুলোর ঊর্ধ্বে নই। পৃথিবীতে নানা রঙের মানুষ রয়েছে বেশিরভাগ মানুষ আত্মপ্রেমে মগ্ন। আরেক শ্রেণির মানুষ রয়েছে সারাক্ষণ প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকে তুমিই দোষী। আবার কেহ কষ্ট দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে, কেহ কষ্ট পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে । কেহ বিনা কারণে দাম্ভিক সাজে।

সাধুর একটাই কাজ অন্যের পেছনে লেগে থেকে বিরক্ত করা। কিছু কাজ পাগল মানুষ আছে, পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বাইরে কাজকেই বেশি ভালোবাসে, অন্যের ভালোটা করেই যেন শান্তি। তেমনি একজন কে চলতে বলতে চিনেছি বহুদিন ধরে।

কাঁধ পর্যন্ত লম্বা কোঁকড়ানো চুল। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে দীক্ষা নিয়েছেন, না খেয়ে থাকার। নাম তার অনুপ সাদি- সফল উপমাহীন। সাদি-পাখিদের ভাষা বুঝেন। মানুষের মতোই পাখিরা প্রেম-বিরহ, হাসি-কান্না এবং বসুন্ধরায় টিকে থাকার জন্য লড়াই করে।

তিনি ভাবেন পরিশ্রমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। মাদার তেরেসা বলেছেন-যদি একশ জনের ক্ষুধা নিবারণ করতে না পার, তবে একজনের ক্ষুধা নিবারণ করো, এমনি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনুপ। 

প্রকৃতি, গাছপালা, বন ধ্বংস হচ্ছে এই নিয়ে অনেকের কোনো বিকার নেই। এখানেও নিজ বেতনের টাকায় খরচ করে গ্রামগজ্ঞে হাটে বাজারে বিনামূল্যে অনুপ বিতরণ করে যাচ্ছেন নানা জাতের গাছ। বলে আসেন, এই বৃক্ষের ছায়া, ফল আপনার সন্তান ভোগ করবে। এই গাছ বিশ্বকে ধরে রাখবে।

অনুপ সাদি গফরগাঁও সরকারি কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তখনও অবশিষ্ট ছিলো আব্দুল গণী স্যারের হাতে লাগানো বিশাল দেবদারু কয়েকটি গাছ। সবাই যখন টাকার লেনদেনে ব্যস্ত অনুপ তখন কলেজ চত্বরে গাছ লাগাতে মরিয়া।

অনেকেই তখন বলা বলি করছিলো পাগলের কান্ড। আজ সাদি নেই এই কলেজ চত্বরে কিন্ত তার শ্রম মেধায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহের একটি অঞ্চলের ২৫% বনাঞ্চলের বড় কাজ করে গেছেন তিনি। আজ এই কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে কত নতুনেরা আসছে যাচ্ছে কেও জানতেও পারলো না অত্র কলেজের সবুজের পিছনে কোন পাগল লোকটি কাজ করেছিলো।

এইচ আর এস বলেছেন- মুক্ত আকাশে উড়া প্রতিটি পাখির চিরায়ত অধিকার রয়েছে যেমনি তেমনি গাছ আমাদের চারপাশে না থাকা, শিকড় বিহীন থাকার মতোই মনে হয়।

বাবা সাবের আলী মা শাহেরা খাতুন দুজনেই লোকসংগীতে জড়িয়ে ছিলেন। এটি অবিভক্ত বঙ্গদেশের মালদহ অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়ের নিজস্ব লোকসংগীত। বীরভূম, মালদহ, বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও বৃহত্তর রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে এই গান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই গান পালার গান এরই একটি অঙ্গ।

অনেকটা কবি গানের মতোই বিভিন্ন আসরে এই গান গাওয়া হয়ে থাকে। এই ধরনের গানের প্রধান উপজীব্য হলো ছড়া ও গান। আলকাপ যে বিশেষ কারণে উল্লেখযোগ্য তা হলো মুসলমানদের এই সংস্কৃতিতে সাম্প্রদায়িক মিলনের সূত্র রয়েছে। লৌকিক জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নানান ধরনের বিষয় আলকাপ গানের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে রাধাকৃষ্ণের কথা আলকাপ গানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। লৌকিক জীবন নিয়ে যে ছড়া আলকাপের গানে স্থান পায় তা সব সময় শ্লীল হয় না। গ্রাম্য জীবনের সহজ সরলতা এই গানের সহজ বিশেষত্ব।

শিক্ষা প্রসঙ্গে অনুপ সাদির একটি আলোচনা দেখুন

মুসলমান সমাজের বিশাল অংশের মধ্যে একসময় এই গান আদৃত হলেও ধীরে ধীরে আধুনিক সভ্য সংস্কৃতির চাপে এর প্রচলন কমে আসছে। অত্র অঞ্চলের বিশিষ্টজন রাজা গণেশ (পঞ্চদশ শতাব্দী, শাসনকাল ১৪১৫) – বাংলার একজন হিন্দু শাসক ছিলেন, তিনি বাংলার ইলিয়াস শাহি রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন।

এখানকার মৃত্তিকার নাম হচ্ছে চুনবিহীন গাঢ় ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা। হরিপুর উপজেলা পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমতলভূমি দ্বারা গঠিত। ১৮৯টি গ্রাম ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই মানুষটি ১৯৭৭ সালে ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের দামোল গ্রামে সবুজ সমারোহে জন্মগ্রহন করেন।

তিনি তাঁর গ্রামের নিবিড় প্রকৃতি ও মানুষ কে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই শ্রমিক। যারাই শ্রম সাধনায় মত্ত তারাই শ্রমিক। সে কারণে পৃথিবীর সকল মানুষই শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে গণ্য।

আমার আরেকটি লেখায় বলেছিলাম, বাংলাদেশের সরকারি চাকরির বড় পজিশন হলো বিসিএস কর্মকর্তা। বিসিএস মানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। যারা বিসিএস কর্মকর্তা তারা সিভিল সার্ভেন্ট, জনগণের সার্ভেন্ট, মানে সেবক, কর্মাচারী, আদেশ পালনকারী।

আরো পড়ুন

সুতরাং আমরা যে যতো বড়ো পদেই অবস্থান করি না কেনো প্রকারান্তরে কারো আদেশের অপেক্ষায় থাকি। প্রত্যেক মানুষকে তাঁর মর্যাদা দেয়া হয় শ্রমের ভিত্তিতে। যে যতো উচ্চমানের কল্যাণকর শ্রম বিনিয়োগ করতে পারেন তিনি ততো বেশি মর্যাদাবান হতে পারে। কাজ মানুষের জীবনের সফলতা বিফলতা নির্ভর করে।

কি পেলাম সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো, দেশের জন্য, সমাজের জন্য ফুল-লতা-পাতা-পাখি ও মানব কল্যাণে কি করে গেলাম সেটাই মূখ্য বিষয়। অনুপ সাদি’রা এখনও আছেন বলেই আমাদের ভুল পথ গুলো দেখিয়ে সহজ সাবলীল উচ্চারণে বলে উঠেন, জাগো বাহে, কোনঠে সবাই।

রচনাকাল ২৬-২৮ মার্চ ২০২৩, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!