ইন্দুমতী সিংহ (১৮৯৮ – ৪ মে, ১৯৭৬) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী। তিনি বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। এজন্য নানা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়ে হয়েছিলো। রাজনীতি জীবনে ছয় বছর জেল খেটেছিলেন।[১]
পরিচয়:
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম বিপ্লবী নেতা অনন্ত সিংহের বড় বোন ইন্দুমতী সিংহ। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৯৮ সালে। তাদের পিতা গোলাপ সিংহ। তাঁদের পূর্বপুরুষরা রাজপুত ছিলেন কিন্তু ইন্দুমতী মধ্যে বংশের কোনো অহংকার ছিলও না।
ইন্দুমতী সিংহ-এর রাজনৈতিক কাজ:
চট্টগ্রামের বিপ্লবী অধিনায়ক সূর্য সেনের বিপ্লবীদলের কর্মী ছিলেন ইন্দুমতী সিংহ। ভাই অনন্ত সিংহ যখন অস্ত্রাগারে লুণ্ঠনের পর পলাতক হন এবং পরে গ্রেপ্তার হন, তখন আত্মীয়-স্বজনেরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। পুলিসের পীড়নের তো কথাই ছিল না।
সেই সময় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ধৃত বিপ্লবীদের মামলা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করবার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ইন্দুমতী সিংহ। মহিলা হয়েও এবং ইংরাজী না জানা সত্ত্বেও তিনি যে কর্মক্ষমতা দেখিয়েছিলেন তা বিস্ময়ের সঞ্চার করে।
কোথাও হিন্দীতে, কোথাও বাংলায় কথা বলে তিনি অদ্ভুত প্রেরণা এনে ফেলতেন দাতার হৃদয়ে। আবার অন্যদিকে পরপদলেহী গোলাম মনোবৃত্তি সম্পন্ন লোকেরা তাকে লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা দিতে অবধি রাখে নি। তারা তার কথার জবাবও দেয়নি, অস্পৃশ্যের মতো দূর থেকে তাকে বর্জন করেছে। কিন্তু ইন্দুমতী সিংহ তাতে দমে যান নি ও হাল ছেড়ে দেন নি।
সিংহের বাচ্চা একাই ঝোপ কেটে পার হয়ে চলে গেছেন। স্নান আহার ভুলে গিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে তিনি মামলার অর্থ সংগ্রহ করতে চেষ্টা করেছেন। সমস্ত বাংলাদেশ, এমন কি ভারতবর্ষের অন্যান্য বহু জায়গায় পরিভ্রমণ করে তিনি অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
এই দুঃসাহসী নারী, পুলিসের প্রধান ঘাঁটি কলিকাতায় লালবাজারে গিয়ে, পুলিসের হৃদয়ে প্রেরণা সঞ্চার করে তাদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি যখন ১৯৩১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঐ কাজের জন্য কুমিল্লায় যান তখন ১৫ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে। তার আগের দিনই শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে ঐ কুমিল্লা শহরে গুলী করে নিহত করেন।
ইন্দুমতী সিংহ-এর জেলের জীবন:
ইন্দুমতী সিংহ ডেটিনিউ অর্থাৎ রাজবন্দী রূপে হিজলী জেলে থাকেন প্রায় ছয় বৎসর। ঐ মামলার অর্থসংগ্রহের কঠিন দায়িত্ব কে নেবে এই চিন্তায় তিনি জেলের মধ্যে রাতে ঘুমাতে পারতেন না সারারাত ছটফট করে কাটাতেন। অন্যমনা থাকবার জন্য, কার্যান্তরে নিজেকে ডুবিয়ে দেবার জন্য তিনি জেলের মধ্যে লীলা নাগের কাছে পড়াশুনা করতে থাকেন এবং ম্যাট্রিক পাস করেন।
ওদিকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার রায় বের হলো। দেখা গেল অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, আনন্দ গুপ্ত প্রভৃতি বিপ্লবীদের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়েছে। ফাঁসির আদেশ এঁদের প্রতি যে হয় নি তাই ছিল যথেষ্ট সেদিন।
মৃত্যু:
১৯৩৮ সালে ইন্দুমতী সিংহ জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৭৬ সালের ৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২]
তথ্যসূত্র:
১. দোলন প্রভা, ২৮ জুন, ২০১৮, “ইন্দুমতী সিংহ চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের একজন নেত্রী”, রোদ্দুরে ডট কম, ঢাকা, ইউআরএলঃ https://www.roddure.com/biography/indumoti-singh/
২. কমলা দাশগুপ্ত (জানুয়ারি ২০১৫)। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী, অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৯। কলকাতা: র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন। পৃষ্ঠা ১৪৮-১৪৯। আইএসবিএন 978-81-85459-82-0।
দোলন প্রভা বাংলাদেশের একজন কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও উইকিপিডিয়ান। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। তার জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ তারিখে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রেলওয়ে নিউ কলোনিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বাংলাদেশের আনন্দমোহন কলেজ থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ফুলকিবাজ এবং রোদ্দুরে ডটকমের সম্পাদক।
গল্পটি পড়ে অনেক ভাল লাগল। তার জীবনে সফলতা অনেক।