ফেসবুকে আত্মনির্মিত অনুপ সাদির ভগ্নাংশ

  • তন্ময় বীর, গবেষক ও লেখক

কীভাবে একজনকে চিনি? – কখনো আকস্মিকতায়, কখনও-বা দীর্ঘ পরিচয়ের ঘাত-প্রতিঘাতে; কখনও একান্তের অবসরে, কখনও সংঘের বহুরৈখিক টানাপোড়েনের আবর্তে। প্রত্যক্ষে চিনি, আবার পরোক্ষের আলোছায়াতেও। আত্মপরিচয় দেওয়া ও অন্যের পরিচয় পাওয়া দুটোই সমান আপেক্ষিক, জটিলতর ও অপূর্ণ। একান্ত আত্মীয়ের পরিচয় নিকট-আত্মীয়ের কাছেও প্রায়শই একমেটে, একপেশে, খণ্ডিত, পাশ্বির্ক অনাবিষ্কৃত রয়ে যায় প্রায়শই। কেননা নিজের জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে একজন ব্যক্তি তার আপনার পরিচয়ের অভিজ্ঞানচূর্ণ নানান আকারে, নানান মাত্রায় ছড়িয়ে রাখে নানান যাত্রাপথের বাঁকে বাঁকে। সেসব একত্র করে, সাফ-সুতরো করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, বিচার-বিবেচনার আলোর নিচে রেখে চেনবার অবকাশ হয় না, সাধ্যেও কুলায়ও না সব সময়।

যে উপাদান বা মাধ্যম ব্যবহার করে অনুপ সাদিকে চেনার চেষ্টা করবো সেভাবে এর আগে কাউকে চেনা হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে ইদানীং তারকা-ব্যক্তিদের টুইটার, ইনস্টা-র মন্তব্য ছবি ইত্যাদি অবলম্বনে খবর হতে আকছার দেখা যায়। একথা ঠিক বলেই মনে হয় যে সোশাল মিডিয়াতে কোনও পোস্ট শুধুমাত্র পোস্ট নয়, তা একটা মেসেজও বটে। সোশাল মিডিয়া সম্পর্কে একটি মন্তব্য হলো–

সোশাল মিডিয়া ইজ নট অ্যা মিডিয়া। দ্য কী ইজ টু লিসন, এনগেজ, অ্যান্ড বিল্ড রিলেশনশিপ। (ডেভিড আলস্টন)।

ফেসবুকের জন্মদাতা জুকেরবার্গ এর ভাষায়–

থিঙ্ক অ্যাবাউট হোয়াট পিপল আর ডুইং অন ফেসবুক টুডে। দে আর কিপিং আপ উইথ দেয়ার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি, বাট দে আর অলসো বিল্ডিং অ্যান ইমেজ অ্যান্ড আইডেন্টিটি ফর দেমসেল্ভস, হুইচ ইন অ্যা সেন্স ইস দেয়ার ব্রান্ড।

এই যে ইমেজ ও আইডেন্টিটি তৈরি করার কাজটি সাদি কীভাবে ফেসবুকের আধারে গড়ে তুলতে চেয়েছে বা আমরা কতটা ধরতে পেরেছি তা দেখা যাক।

সাদির ফেসবুক ইন্ট্রো-তে লেখা আছে- ‘দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদী রাজনীতি বিশ্লেষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক, কবি ও উইকিপিডিয়ান।’ ‘কর্মী@মার্কসবাদ’; ঢাকা কলেজে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ মানবিকীবিদ্যায় পড়েছে; ঢাকায় বাস করে এবং তাকে অনুসরণ করে ১১১৮ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী। রোদ্দুরে.কম ও রোদ্দুরে-র ইউটিউব লিংক দেওয়া আছে; যেখানে সে নিয়মিত লেখে বা পছন্দ করে। তার প্রোফাইল ছবি হিসাবে নানান সময়ে যে ছবিগুলি ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলি নিছক ছবি নয়, বার্তাধর্মী পোস্টার। বাংলা ইউকিপিডিয়ার একলক্ষ নিবন্ধ, ভারতের বিস্তারবাদ-এর বিরোধিতা, কার্ল মার্কস-এর দু’শ বছর, নভেম্বর বিপ্লবের এক’শ বছর, সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন ও রামপাল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতার পোস্টার ব্যবহৃত হয়েছে।

এছাড়াও প্রোফাইল ফটো হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে তার নিজের সম্পাদনা করা বই ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা’, ‘সমাজতন্ত্র’ , ‘মার্কসবাদ’, ‘সাহিত্য প্রসঙ্গে লেনিন’ ও ‘নারী’র প্রচ্ছদ; জীবনানন্দ দাশের কবিতার উদ্ধৃতি, এমা গোল্ডম্যানের উক্তি, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে সংবাদপত্রের ফিচার, ঋত্বিক ঘটক এবং মার্কস-এর উক্তি। যে ভিডিওগুলি আপলোড করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই বন্ধুদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এছাড়াও বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে একটি ভিডিও, একটি সেমিনার ও ভুপেন হাজারিকার গানের একটি নেপালি অনুবাদের ভিডিও। খেলাধুলা, সিনেমা, টিভি অনুষ্ঠান সম্পর্কে তার কোনও পোস্ট নেই।

অনুপ সাদির ফেসবুক ‘ইভেন্ট’-এ উল্লেখিত বিষয়গুলি কালানুক্রমে Wikimania ২০২১, ঢাকা উইকিপিডিয়া আড্ডা, ডিসেম্বর ২০১৯, ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙ্গার প্রতিবাদে আমরা (২০১৯), এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ সভা (২০১৯), সেমিনার: কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিকতা (২০১৯), তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শতবর্ষ উদযাপন ও আলোচনা সভা (২০১৯), পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই না (২০১৯), মাওবাদী নেতা ‘নিজামউদ্দিন মতিন’ (২০১৯), লাউয়াছড়ায় মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ বন্ধের দাবীতে মানব বন্ধন (২০১৯), অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা (২০১৯), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান মানুষের মুক্তি ও আজকের প্রেক্ষাপট: আলোচনা (২০১৯), অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা (২০১৮), Naxalbari- Way to Classless Casteless Society (২০১৮), প্রতিকথা আড্ডা- ২ : কবিতায় সমাজ সচেতনতা ও রাজনীতি (২০১৮), রামপাল, রূপপুরসহ দেশ বিনাশী সকল প্রকল্পের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত (২০১৮), আফরাজুলের হত্যা ও মহারাষ্ট্রে আদিবাসী নিধনের প্রতিবাদে মিছিল (২০১৭), ময়মনসিংহ: সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন (২০১৮), আলোচনা সভা: জাতি-সমস্যা প্রশ্নে লেনিন, স্ট্যালিন ও সিপিএসইউ (২০১৮), Wiki Loves Monuments in Nepal Photo-Walk (২০১৮), বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের প্রাক্তন সভাপতি শান্তনু কায়সার-এর স্মরণ সভা (২০১৮)। দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়ানো এই সব ঘটনা তাকে আকৃষ্ট, আলোড়িত করেছে।

অনুপ সাদির কয়েকটি বক্তৃতা দেখুন

ছবির সংখ্যা অনেক; ছবিতে অনুপ (ফোটোস অব অনুপ) এবং অনুপের ছবি (অনুপ’স ফোটোস) দুটি পর্যায়ে যেসব ছবি দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে একদিকে তার নানান কাজকর্মের ছবি অন্যদিকে তার নিজস্ব সমাজ-ভাবনা ও বৌদ্ধিক চিন্তার পরিসরের ছাপ পরিলক্ষিত। যেমন ২০২০ সালে আপলোড করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন একটা ব্যানার টাঙাচ্ছে তাতে লেখা যে, মেঘালয়ের সমস্ত বাঙালিরাই বাংলাদেশ।[১] তার অন্যান্য ছবির মধ্যে মার্কসীয় চিন্তা-চেতনার নানান মনীষী ও তাঁদের উক্তি সম্বলিত ছবি, অনুপের নিজের ভালো লাগা ও নিজের লেখা বইয়ের ছবি, মাও সেতুং-এর রচনাবলীর লিংক। এবং কিছু গ্রাম্য গাছপালার ছবি যেগুলি তার শৈশবের স্মৃতি জাগানিয়া। আমাদেরও মনে পড়ে এক ধরনের গাছের আঠাতে (‘চক্ষুদানা’ নামে আমারা চিনতাম, অনুপ যাকে বলেছে ঢাকুই, কচা বা ভেল্লা গাছ) ঘাসের রিং বানিয়ে তাতে চুবিয়ে মুক্ত মাঠের বাতাসে ‘বল’ (বাবল) ওড়ানোর অপার আনন্দ, যা আজকে শহুরে বাতাসে বাবল তৈরির কৃত্রিমতার থেকে অনেক অনেক দূরে।[২] অনুপ বড়ো হয়ে যে চিন্তাশীল, তর্কশীল ও যুক্তিবান হবে সেই সাদির আর একটা সমান্তরাল সবুজ সত্তার অস্তিত্ব আমদের চোখ এড়িয়ে যায় না এই সব পোস্টের কল্যাণে।

এবার আসা যাক ওর বন্ধুতালিকার কথায়। কিন্তু সেখানে আমাদের একটু থমকাতে হয়। সে সকলকে তার বন্ধু তালিকা দেখার অনুমতি দেয় না। কেবল তার বন্ধু হলে কমন বন্ধুদের দেখা যায়। এ থেকেও বোঝা যায় ব্যক্তিগত পরিসর সম্বন্ধে সে যথেষ্ট সচেতন। সোশাল মিডিয়ায় থেকেও নিজের সব তথ্য সে সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে নয়।

এর পর তার দেওয়ালে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টের কথায় আসা যাক। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত যে পোস্টগুলি সে তার দেওয়ালে দিয়ে চলেছে তার মধ্যে অন্যতম পুরাতন একটি পোস্টে ৮ জুন ২০১৪-তে। সেখানে সে কবিতায় লিখছে – ‘তোমার হাত ধরতে পারি যদি/ পাবো অমার স্বপ্নমাখা নদী।’ কবিতার রোমান্টিকতা দিয়ে ফেসবুকের পথচলা শুরু করছে যে অনুপ, সে কিন্তু ক্রমশ দ্বান্দ্বিক সমাজবাস্তবতার সঙ্গে তার গভীর পরিচয়ের নিদর্শন দিতে থাকেন। আজকে বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের যে পারিশ্রমিক বাড়ানোর আন্দোলন চলছে সেরকমই ২০১৪ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম আট হাজার টাকা বাড়ানোর একটি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জনৈক আনোয়ার হোসেন নামক একজনের একটি পোস্টের সমর্থনে সাদি লেখে–

বাংলাদেশের মুক্তমনা, মুক্তচিন্তক আর নাস্তিকরা নীতি-বিবর্জিত ভোগবাদী। কমিউনিজম বিরোধিতায় এরা চরম ফ্যাসিবাদের দোসর। এরাই মূলত আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক প্রপাগান্ডিস্ট। বাংলাদেশে মুক্তচিন্তক, মুক্তমনা আর নাস্তিকদের কাজের ফলাফল হচ্ছে লিগ-বিএনপির স্বার্থরক্ষা করা। এরা সমাজ-প্রগতির সর্ববিধ বিরোধী।[৩]  

দেখা যায় সমাজ-রাজনৈতিক বিষয়সমূহের প্রতি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বক্তব্য পোস্ট করছে এবং সমধর্মী পোস্টকে ট্যাগ করছে। যেমন লালবর্ণ নামে একজনের পোস্টকে সে শেয়ার করেছে ১ জুন তার বিষয়-

যতক্ষণ না একটি বিপ্লবী পার্টিতে লেনিনীয় সূত্রানুযায়ী শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ৮:২ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা মধ্যবিত্তের স্বার্থ রক্ষা করে চলে।

বিভিন্ন বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক মতধারার প্রতি তার মতামত জানাচ্ছে যেমন, বাসদ, জাসদ নিয়ে; আবার বিভিন্ন বাম ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব নিয়ে নিয়ে সে আলোচনা করেছে। যেমন বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মার্কসবাদী বিপ্লবী নেতা কমরেড নগেন সরকারকে নিয়ে, মার্কসবাদী তাত্তি¡ক বিপ্লবী রেবতীমোহন বর্মণকে নিয়ে আলোকপাত করেছেন। আবার এবঙ্গের বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক, অনীশ সংস্কৃতি পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কবি সমীরণ মজুমদার যখন মারা যান তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গে অনেকেরই সে-খবর জানার আগেই ২৭ মে ২০২২ বাংলাদেশের থেকে প্রতিবেদন লিখে প্রতিক্রিয়া জানায় অনুপ। অনেক সময় দেখা যায় তার বক্তব্য ভীষণ র‌্যাডিকাল যেমন–

ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। যারা ভেঙ্গে ফেলতে চাইছে, তাদেরকে আমার খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।[৪] (ডিসেম্বর ২০১৯)।

ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ মারা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সে লেখে–

আধুনিক বর্বর ব্রিটিশদের গর্ব করার মতো কিছু নেই। একটা পিশাচিনী ছিল। সেও নাই হয়ে গেল।[৫] (৯ সেপ্টেম্বর ২০২২)।

কিম্বা,

বুয়েটের মূর্খ মাস্টারেরা জানে না রেইনট্রি বা কড়ই গাছের পাতা চৈত্র মাসে ঝরে যায়। ফলে প্রতি চৈত্র মাসে তারা বুয়েটের রেইনট্রি গাছগুলা কাটতে চায়। তেমনি ভাঁড় চঞ্চলেরা বন্য প্রাণি সুরক্ষা আইন জানবে না। কিন্তু বন্য পাখির মাংস খাবে। মূর্খতা এখনকার জনপ্রিয়দের অহংকার।[৬] (১৮ আগস্ট ২০২২)।  

ভারতের রাজনীতি নিয়ে তার বিশেষ আগ্রহ ও সচেতনতা দেখা যায়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বেশ স্পষ্ট উচ্চারণ লক্ষণীয়। ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ সালের একটি পোস্টে সাদি লিখছে–      

পশ্চিমবঙ্গ পরাধীন কেন?

আপনি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় দশদিন ঘুরেন, দেখবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা। তারা তা ভোলেনি, চোরাস্রোতের মতো মনের গহীনে মনে রেখেছে; এবং নিজেদের আর্থ সামাজিক অবস্থা বদলে ফেলেছে। এটাই স্বাধীন দেশের একটা দৃশ্যমান ফলাফল।

বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা গরিব হতে হতে এখন গুজরাটি আর মাড়োয়ারীদের দাস হয়ে গেছে। কিন্তু হিন্দু হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলা কঠিন। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়নি, ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া হিন্দুরা সব দোষ চাপায় যারা তাদেরকে খেদিয়ে দিয়েছে। দিল্লি-বোম্বাই যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সব সম্পদ লুট করে নিয়ে গেল, সেই খেয়াল বেশিরভাগের নাই।[৭] 

এই পোস্টের একজন মন্তব্যকারীর উত্তরে সে লেখে–

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ২৮ শতাংশ, আর চাকরি ২ শতাংশ। তদুপরি এটাও সত্য যে, বৈষম্য ও নির্যাতনে বাংলাদেশ এগিয়ে। আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করতে পারলেও গণতান্ত্রিক আচরণ রপ্ত করতে পারিনি। তার জন্যও আবার ভারতের রাজনীতি সামান্য হলেও দায়ী।

শেষ লাইনটিতে বোঝা যায় অনুপ সাদি বাংলাদেশী হিসাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দ্বারা ঈষৎ হলেও আক্রান্ত, সেটা অস্বাভাবিকও নয়। কেননা আমরা আগেই দেখেছি তাকে ভারতের বিস্তারবাদের বিরোধিতার ইভেন্টের পোস্টার পোস্ট করতে। তার বিবেচনায় ভারতের পুঁজিবাদী শিল্পপতিদের বিস্তারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়নি, একথাও মনে রাখার।

বদরুদ্দিন উমরকে[৮] নিয়ে একটি পোস্টে দেখি ভারতে থাকলে তিনি কী হতে পারতেন না তা নিয়ে একটু উষ্মার সঙ্গে বক্তব্য রেখেছে অনুপ। একটি সাক্ষাৎকারে উমরের বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানের মননশীলতা নেই এমন উক্তি তাকে রাগিয়ে দিয়েছে। সেদিক থেকে অনুপকে একটু অ্যাংরি ইয়ং ম্যান হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। হয়তো কখনও কখনও তাৎক্ষণিকের তাড়নায় ফেসবুকের পোস্টগুলি সংক্ষিপ্ত এবং সেগুলি আরও বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে। এই সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখার যে অনুপ কিন্তু শিক্ষক হিসাবেও বেশ জনপ্রিয়।  তার ছাত্রের একটি পোস্ট এরকম–

প্রিয় মানুষ, প্রিয় Anup Sadi স্যার, যার স্নেহে আছি গত ১৫ বছর ধরে। তিনি শুধু আমার তরুণ বয়সের হিরো নন, বাকি জীবনেরও। স্যারের জন্য ভালোবাসা।[৯] (রকিবুল হক সুলভ, ১৬ অগস্ট ২০২২)।

ডিজিটাইজেশন ও বিশেষ করে মুক্ত জ্ঞানচর্চায় তার আগ্রহ ও অবদান নানান দিক থেকে তার মন ও মানসিকতার ব্যাপ্তি দিয়েছে। মার্কসবাদ লেনিনবাদের চর্চা যেমন তাকে যুক্তিবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে তেমনই এই অন্তর্জালের মুক্ত ও বৈশ্বিক পরিসরে সে নিজের পরিচয় খোঁজায় সমান আগ্রহী।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর মধ্যে জন্মানো প্রজন্মের কথা মনে রেখে জুকেরবার্গ বলেছেন–  

In a recent survey of millennials around the world asking what most defines our identity, the most popular answer wasn’t nationality, ethnicity or religion, … It was citizen of the world. That’s a big deal. Every generation expands the circle of people we consider one of us. And in our generation, that now includes the whole world.

যদিও অনুপ সাদির জন্ম ১৯৮০-র কিছুটা আগে তবুও এই ক্রমশ ভেদরেখাহীন দেশকালের ব্যাপ্তিকে সে অনুভব করে শিরায় শিরায়। তার কিছুটা চেহারা সাদির ফেসবুক অনুসরণ করলে চিনতে পারি বইকি। সেটা যে পুরো অনুপ সাদি নয় তা কেনা জানে।

আরো পড়ুন

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.facebook.com/photo.php?fbid=2770799906469167&set=pb.100006175548993.-2207520000..&type=3
  2. https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152540769984383&set=t.100006175548993&type=3
  3. https://www.facebook.com/plugins/post.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fanupsaadi%2Fposts%2F1518112425071261 
  4. https://www.facebook.com/anupsaadi/posts/pfbid0mZoFPkdY1HQt6AiTZLcEo2ahSo5kvWFSBfgYkXTHj94v8jdYQS6udPucGXV5kcoPl
  5. https://www.facebook.com/anupsaadi/posts/pfbid0tdzTCyR2xsMJVCEEG1n1qvgjyVb3r2yPxxZPHLTjuw7QgJRv156eTyawyS3aW9Ppl
  6. https://www.facebook.com/anupsaadi/posts/pfbid02cYF6kwXoyRMyUbYpA5W9F7dYzgT6fopYThhErwEAW46VzipeFS1mmuJkJDtvAjbnl
  7. https://www.facebook.com/anupsaadi/posts/pfbid0RDnNBvigyW887Ydv2HGLkxcCeRWeGf9Q1YmBGC1PPkQCs4pv35mBTAHHMhkxYvfVl
  8. https://www.facebook.com/anupsaadi/posts/pfbid0257XWKBNBeNrLxqM9RHSRdcdS5kSBDtr8okLciRPpE491x6Pft6XSqpEJAfAnA4Lal
  9. https://www.facebook.com/e.sulav/posts/pfbid0gaPexgampy5xKKc4nnyMuoTNcSTg9SSKdSAEedSdk93pSDreZdB3cLor4t4tX7GAl

১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, কলকাতা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনুপ সাদি সম্পর্কিত এই মূল্যায়নটি এনামূল হক পলাশ সম্পাদিত সাহিত্যের ছোট কাগজ অন্তরাশ্রম-এর অনুপ সাদি সংখ্যা, সংখ্যা ৪, পৃষ্ঠা ৫৮-৬২, ময়মনসিংহ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত এবং সেখান থেকে ফুলকিবাজ.কমে প্রকাশ করা হলো।

Leave a Comment

error: Content is protected !!