লোকশিল্পী ও ভূমিকন্যা শাহেরা খাতুন

পূরবী সম্মানিত
পূরবী সম্মানিত

সাধারণের গন্ডি পেরোনো এক রত্নগর্ভা। প্রয়োজন নেই রাষ্ট্রীয় সীমাবদ্ধ পদকতালিকায় নাম লেখানোর, তাবত পৃথিবীকে উর্বর করার মিছিলে তাঁরা হেঁটে যায়, মিছিলি মিছিলি জীবনে যাঁরা রেখে যায় পদচিহ্ন, অমোচনীয় কালিতে তাঁদের নাম লিখা থাকে পৃথিবীর পথে পথে, তিনি শাহেরা খাতুন

সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা কর্মদ্দোমী, প্রকৃতি থেকে পাঠ নিয়ে সদা নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ। জগতের কল্যাণের নিমিত্তে জীবন, এই মহিমায় আলোকিত জীবন তাঁর, আরোপিত নয়, শ্বাশত লোকজ সংস্কৃতিতেই মানুষের আনন্দ, এতেই চিত্তের মুক্তি। শিক্ষা সংস্কৃতি নতুন পথ ও মতের দিশা দেয়, এটাই কাঙ্ক্ষিত পথ। নিজের রচিত পথে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

ভূমিজ, লোকজ আর আত্মজ রক্ষায় আপসহীন, ঐক্য আর সংগ্রামে দুহাতে লড়েছেন সমানে। প্রকৃতি আধার, আশ্রয় আর জীবন। লড়াই-ই জীবন, তাই বিরামহীন লড়ে যাওয়া তাঁর। অজৈব জৈবের মিথস্ক্রিয়াটা বুঝতেন, তাই প্রজাতির বিস্তার ও রক্ষায়, বনভুমি রক্ষায়, সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনখেকো, পাখিখেকো, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে  লড়তেন অবিরত।

তখনও নারীরা ব্যাপকভাবে বাইরে বের হতো না, নারী শিক্ষার প্রসার হয়নি, শাহেরা খাতুন মাত্র কয়েক বছর মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তারপর পাঠ নিয়েছেন প্রকৃতি থেকে। স্বশিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ছুটে বেড়িয়েছেন গন্ডির বাইরে, নিজের সীমানাকে নিজেই অতিক্রম করেছেন।

সংস্কৃতি অনুরাগী শাহেরা খাতুন লাঠি খেলা ও আলকাপ গানের শিল্পী স্বামী সাবের আলীর সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় লোকজ গীতের প্রধান গায়েনসহ লোকজ সংস্কৃতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। মূলত জীবন ও জীবিকার জন্যই কৃষিজ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করলেও কৃষি উন্নয়নে তাঁর ভুমিকা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে বেগবান করেছে।

জীবন এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জীব তার জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে স্থানান্তর করে বংশধরের মধ্য টিকে থাকে। শাহেরা খাতুনের আত্মজরা শাহেরা খাতুনের প্রতিভাকে তাদের নিজ জীবনে আরও সমৃদ্ধ করে একটি সম্ভাবনাময় পৃথিবী গড়তে অবদান রাখছে। তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আমি মনে করি শাহেরা খাতুন একটি নতুন পৃথিবী তৈরিতে আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। লোকশিল্পী ও ভূমিকন্যা, তোমাকে অভিবাদন জানাই।

Leave a Comment

error: Content is protected !!