অরবিন্দ সাংমা দিও নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা

অরবিন্দ সাংমা দিও ছিলেন বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নেত্রকোণার দূর্গাপুর উপজেলাধীন পূর্ব উৎরাইল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতার নাম পুলীন চন্দ্র রুরাম।

অরবিন্দ সাংমা দিও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। যুদ্ধের সময় সপরিবারে বাংলাদেশের চারুয়া পাড়া সীমান্ত ফাঁড়ি পেরিয়ে মার্চ মাসের শেষ সপ্তায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নেলুয়াগিরি নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আঠারো বছরের এ টগবগে তরুণ উক্ত উদ্বাস্তু শিবিরে গিয়েই জানতে পারলেন তাঁদের পরিচিত অনেক গারো দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছে।

অরবিন্দ সাংমা দিও বাঘমারা ইয়ুথ সেন্টারে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নাম লিপিবদ্ধ করেন। মেঘালয়ের রংনাবাগ নামক স্থানে ২৯ দিনের এক স্বল্প মেয়াদী ট্রেনিং গ্রহণ করেন। রাইফেল, এসএনআর, এলএমজি, এসএমজি, গ্রেনেড, দুই ইঞ্চি মর্টার চালনা এবং সেতু উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা নিক্ষেপ কৌশল রপ্ত করেন। অতঃপর তিনি ১১নং সেক্টর (সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন জনাব হামিদুল্লাহ খান) ভুক্ত হয়ে সংগ্রাম শুরু করলেন। উক্ত সেক্টরে তিনি ফজলু কম্পানীর সংগে যুক্ত ছিলেন। কম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন ফজলুর রহমান আকনজী। তাঁদের অপারেশন এরিয়া ছিল পূর্বে দাম্বুক বর্ডার থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশের ভবানীপুর পর্যন্ত এবং দক্ষিণে দুর্গাপুর পর্যন্ত। তিনি মুক্তি বাহিনীর সহকারী প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে ৩৩ জন গেরিলাকে নেতৃত্ব প্রদান করেন।

১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের এক সকালে অরবিন্দ সাংমা দিও প্রথম অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। বাছমবাড়ী ও দুর্গাপুর সেনা ফাঁড়ীতে আনুমানিক সকাল ৯-১০ টার দিকে তাঁরা গুলি শুরু করেন। শত্রুপক্ষও পাল্টা গুলি করে। তবে কোন পক্ষেরই হতাহতের সংবাদ জানা যায়নি। অরবিন্দ সর্বমোট ১১টি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে ৮টিতেই সফলতা অর্জন করেন। তবে অক্টোবর মাসে এক অপারেশনে ১ জন সহযোদ্ধার পায়ে গুলি লাগে। সেদিন ভোরবেলা দুর্গাপুরের নলুয়াপাড়াতে পাক সেনারা যখন টহল প্রদান শেষে ফিরছিলো, তখন তাঁরা ৪৫ থেকে ৪৭ জন গেরিলা পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে লুকিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ পূর্বক তাদের অনেককে আহত ও নিহত করেন। অতঃপর শত্রু সৈন্যের লাশ গ্রহণের জন্য তাঁরা এগিয়ে যান। পূর্বের কথামত ভারতীয় বিএসএফগণ ঐ সময়ে পেছন থেকে কভারিং দিতে ব্যর্থ হন তাদের মেশিনগান বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে। এমতাবস্থায় শত্রু সৈন্যরা সজ্জিত হয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। ফলে একজন মুক্তিযোদ্ধা পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হন। অপরদিকে শত্রুপক্ষের আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ জন সৈন্য নিহত হয়। কেননা, শত্রু সৈনারাই তাদের মৃত সৈনিকদের লাশ পূর্বাহ্নেই উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

আরো পড়ুন

অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পরে বাড়ী ফিরে দেখলেন তার বিধ্বস্ত গৃহ গাছপালা। পরবর্তীতে অরবিন্দ অস্ত্রের পরিবর্তে এবার হাতে বই-কলম তুলে নিলেন। ভর্তি হলেন বিরিশিরি পি. সি. নল উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে। ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি বিরিশিরিতে সাইকেল ও মটর সাইকেল ম্যাকানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অরবিন্দ মুক্তি যোদ্ধার সনদপত্র পেয়েছিলেন কিন্তু ১৯৭৬ সালে সিঁদেল চোর তার গৃহে সিঁদ কেটে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে উক্ত সনদ পত্রটিও নিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র

১. অনুপ সাদি, দোলন প্রভা, নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ, টাঙ্গন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, জুন ২০২৪, পৃষ্ঠা ৩২১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!