অনুপ সাদির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল ‘স্বদেশ চিন্তা সংঘে’র সাপ্তাহিক বৈঠকে। তখন ও ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এম. এ. শেষ বর্ষের ছাত্র। প্রথম থেকেই আমার মনে হয়েছে, ও মেধাবি ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার সাহিত্যবোধ ও বিচারক্ষমতা লক্ষ্য করে আমি মনে করতাম, ভবিষ্যতে একজন সাহিত্য সমালোচক এবং চিন্তাবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। মার্কসবাদের, বিশেষ করে মাও সেতুঙের চিন্তাধারার প্রতি তার ছিল সীমাহীন আগ্রহ ও সমর্থন।
অনুপ সাদি ছিল ‘বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল’ কর্তৃক পরিচালিত ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টে’র একজন কর্মী। একটা সংগ্রাামী স্পৃহা তার মধ্যে ছিল। অধ্যাপক ড. হুমায়ূন আজাদ পাক সার জমিন সাদ বাদ বইটি লেখার জন্য যখন জঙ্গিবাদী একটি গ্রুপের দ্বারা আক্রান্ত হন এবং প্রাণ হারানোর মতো অবস্থায় নিপতিত হন তখন জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়, তাতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছিল। … … সে সময় অনুপ সাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
অধ্যাপক আহমদ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসে থাকা কালে, এবং পরে মগবাজারে ও ধানমণ্ডিতে থাকা কালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (প্রথমে রবিবারে, পরে শুক্রবারে) তাঁর ড্রয়িং রুমে দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায় নিয়মিত আড্ডা হতো। তাতে উপস্থিত সবারই মত প্রকাশের সুযোগ থাকত। তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র, সাংবাদিক ও আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, প্রবীণ ও নবীন লেখক উপস্থিত থাকতেন। কেউ কেউ নিয়মিত আসতেন, অনেকে অনিয়মিত। রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, জনজীবনের সমস্যা ও সমাধানের উপায় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হতো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রায়শ আলোচনার বিষয় হতো। কোনো কোনো বিষয় আলোচনার জন্য আগেই নির্ধারিত করা হতো।
ইউটিউবে দেখুন একটি বক্তৃতা
অধ্যাপক আহমদ শরীফের মৃত্যুর পরেও তাঁর বাসাতে এই বৈঠক নিয়মিত চলে। তখন সকলের অনুরোধে আমাকে অধ্যাপক আহমদ শরীফের শূন্য স্থানে কাজ করতে হয়েছে। এই সময়টাতেই অনুপ সাদি ‘স্বদেশ চিন্তা সংঘে’র সাপ্তাহিক বৈঠকে নিয়মিত আসত। তখন থেকে আমার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
অনুপ সাদি কবিতা লিখে আসছে, গণতন্ত্র বিষয়ে অনেকের লেখা নিয়ে একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। নানা-বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা লিখে আসছে। মার্কসবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারাকেও বিচার বিবেচনা করে বুঝতে চেষ্টা করছে।
অনুপ সাদির চিন্তাশীলতা ও সৃষ্টির আগ্রহ সম্ভাবনার পরিচয়বাহী। তার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু আশা করি।
আরো পড়ুন
- জাগো বাহে, কোনঠে সবাই
- সাহিত্য প্রসঙ্গে গ্রন্থ সম্পর্কে একটি আলোচনা
- সমাজতন্ত্র ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অবস্থা
- অনুপ সাদি মার্কসবাদের একজন সবিশেষ কর্মি
- অনুপ সাদি, নিবেদিতপ্রাণ একজন চিন্তক নিয়ে কথকতা
- শব্দ শ্রমিক অনুপ সাদি
- অনুপ সাদির দুই দশকের কাজকর্ম
- অনুপ সাদি অবিরাম চলেন সমাজবিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিজ্ঞানের অঙ্গনে
- অনুপ সাদি একজন সংগ্রামী কলমযোদ্ধা
- নিজকথায় লোককথায় হুমায়ুন আজাদ গ্রন্থের আলোচনা
- বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা হচ্ছে অনুপ সাদি সম্পাদিত গণতন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি এনামূল হক পলাশ সম্পাদিত সাহিত্যের ছোট কাগজ অন্তরাশ্রম-এর অনুপ সাদি সংখ্যা, সংখ্যা ৪, পৃষ্ঠা ০৯, ময়মনসিংহ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত এবং সেখান থেকে ফুলকিবাজ ডট কমে প্রকাশিত।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ঢাকা।
আবুল কাসেম ফজলুল হক (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক, ঐতিহাসিক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। ‘আশা আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে’ ও ‘রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।