আমার বড় খালা যেমন সবার বড়, তেমনি সবার কাছে বড়র মতোই শ্রদ্ধা পেতেন

আমার শ্রদ্ধাভাজন বড় খালা এমন একজন বড় মানুষ ছিলেন যার সম্বন্ধে কিছু লেখার ইচ্ছা পোষণ করছি। আমার খালার নাম ছিল শাহেরা খাতুন। আমার ছোটবেলায় আমি দেখেছি, তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি খালু মারা যাবার পর শেষ জীবনে একা একা থাকতেন। কারণ তার সন্তানেরা চাকরি ও অন্যান্য কাজে বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন।  

আমার বড় খালার জীবনে সবচেয়ে বড় যে গুণটি পেয়েছি তা হচ্ছে শিক্ষা। আমার লেখাপড়ার ব্যাপারে তার নিকট থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। লেখাপড়া করতে তিনি কেবল আমাকেই নয়, সবাইকেই অনেক উৎসাহ দিতেন। বারবার বলতেন, শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যা অন্যেরা চুরি করতে পারে না। শিক্ষিত হলে সবারই ভালো হবে।

আমার বড় খালার মন মানসিকতা ছিল অনেক উঁচু মানের। তার আদর মাখা স্নেহে আমরা সবাই মুগ্ধ হতাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা সবাই তাঁকে বড় খালা নামেই জানি। তার নামের প্রতি গুরুত্ব দিতাম না। এমনকি আমার মামারা তাঁকে বড় বুবু বলে ডাকতেন। কোথাও কোনো আলোচনা হলে সবাই বলত বড় বুবু, বড় বেটি বা বড় খালা।

আমার বড় খালার চলাফেরা ছিল খুব সাধারণ মানের। মানুষকে সহজে আপন করে নিতেন এবং সবাইকে যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি যেমন সবার বড় ছিলেন, আত্মীয় স্বজন সবার কাছে বড়র মতোই শ্রদ্ধা পেতেন। সব আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর নিতেন। গ্রামের গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।

আমার মা প্রায়ই বলতেন, ছোট বেলায় মা মারা যাবার পর মায়ের স্নেহ মায়া মমতা আমরা আমার বড় বোনের কাছ থেকে পেয়েছি। আমজাদ ভাইয়ের চাকরি, অফিসের কাজ বা অন্যান্য ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতেন। শাহেরা বুবু যখন ব্যাঙ্কে যেতেন তখন সবাই তাঁকে বড় বুবু বলেই ডাকতেন। ব্যাংকের সবার কথা ছিল যে, তিনি আমজাদ স্যারের বড় বুবু, তাই আমাদের সবারই বড় বুবু।

আমার বড় খালা খাওয়া দাওয়া করতেন খুব সাধারণ মানের। গ্রামের পরিবেশকে তিনি খুব ভালোবাসতেন এবং নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মারা যাবার ঘরটি ছিল একটি গ্রামীণ ছোট্ট ঘর। আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর জানাজার নামাজ পড়ানোর। তাঁকে দাফন করা হয় তাঁর দামোলের ছোট্ট ঘরটির পাশেই। পরিশেষে আমি তার বিদেহী রুহের মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করেন।

Leave a Comment

error: Content is protected !!