অক্ষয় কুমার সরকার ছিলেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিমনা কবিয়াল, বাগ্মী, হৃদয়বান ও আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে পণ্ডিত। তিনি বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার রাঘবপুর গ্রামে ১৯০৯ সনে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নবীন চন্দ্র সরকার এবং মাতার নাম অমৃতা সুন্দরী।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চান্দুরা গ্রামে মাতুলালয়ে তার শৈশব জীবন অতিবাহিত হয়। তখনকার যুগে চান্দুরা গ্রামের পরিবেশ ছিল আদর্শ শিক্ষা ও কৃষ্টির অনুকুলে। রাঢ়ীকুল ব্রাহ্মণ সমাজ তখন চান্দুরা গ্রামে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উচ্চ শিখরে আসীন। তাই পার্শ্বস্থ সকল সম্প্রদায় তাদের জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হয়েছে। তিনি চান্দুরায় নগেন্দ্র নাথ গোস্বামী তর্ক ব্যাকরণতীর্থ মহাশয়ের নিকট সংস্কৃত ভাষায় তোল পাশ করেন। অতঃপর দীর্ঘকাল তার সান্নিধ্যে থেকে তিনি আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে কবিরাজী বিদ্যা আয়ত্ব করেন।
শৈশবকাল হতেই অক্ষয় কুমার সরকার সংগীতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তাই তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে সংগীতের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি অনুশীলন শুরু করেন। চান্দুরা গ্রামে তখন কবিগান শিক্ষা দেওয়া হতো। টোল শিক্ষার সাথে সাথে শাস্ত্রীয় ধারায় সংগীতামোদী ব্যক্তিগণ তা আয়ত্ব করতেন। অচিরেই তিনি সেখান হতে শিক্ষা লাভ করে অত্র এলাকার একজন সুপ্রসিদ্ধ কবিয়াল হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। কর্ম জীবনের প্রথমেই তিনি বৈদ্য ব্যবসা আরম্ভ করেন। কিন্তু এই ব্যবসায় আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে না পেরে ১৯৪৭ সনে আঠারবাড়ীর জমিদারের অধীনে কেন্দুয়া উপজেলার সদরস্থ এস্টেটের নায়েব হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করার সংগে সংগে তিনি চাকরিচ্যুত হন। এই সময় তাকে সাময়িক আর্থিক দূরবস্থার সম্মুখীন হতে হয়।
আরো পড়ুন
- অনিল চন্দ্র তালুকদার ছিলেন সংগীত শিল্পী এবং সংগীত শিক্ষক
- অঞ্জনা রায় একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
- অছিম উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক
- অখিলানন্দ স্বামী ছিলেন ধর্মপ্রচারক, সুবক্তা ও সুপণ্ডিত
- অখিল পাল একজন ভাস্কর শিল্পী
- অখিল চন্দ্র সেন রাজনীতি-সচেতন ও সংস্কৃতিমান আইনজীবী
অক্ষয় কুমার সরকার যৌবনের প্রারম্ভে কবিয়াল হিসাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন হাস্য রসিক। তিনি গীতা, মহারামায়ণ, ভজণ ও পৌরাণিক কাহিনীর শ্লোক ও উদাহরণসমূহও আলোচনা করতেন। সংস্কৃত ভাষায় তার পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি যাত্রাভিনয়ে একজন ভাল অভিনেতা ছিলেন। ১৯৫৮ সনে ‘চন্দ্রহাস’ পালার যাত্রাভিনয়ে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক বাহিনী, রাজাকার ও আলবদরের অত্যাচারে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ কররে মেঘালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ঐ বৎসরই অক্টোবরের ৫ তারিখ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মেঘালয়ের মহেশখোলা শরণার্থী শিবিরে অক্ষয় কুমার সরকার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১]
তথ্যসূত্র
১. অনুপ সাদি, দোলন প্রভা, নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ, টাঙ্গন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, জুন ২০২৪, পৃষ্ঠা ১১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।