কমরেড আবদুল বারী (৬ জুন ১৯৪৭ – ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩) ছিলেন একজন সাম্যবাদী ধারার রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক। তার জন্ম মোহনগঞ্জ উপজেলার টেংগাপাড়া গ্রামে। পিতার নাম আবদুল কাদির এবং মাতার নাম মুক্তা কাদির। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মোহনগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মোহনগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে। ১৯৬৫-৬৬’র ছাত্র সংসদে তিনি নাট্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তী বছরের ছাত্র সংসদে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এইচএসসি পাসের পর নেত্রকোনা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন এবং নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে পুরো নেত্রকোনা জেলা ঘুরে ঘুরে জনমত তৈরি করেন। ১৯৭০ সাধারণাব্দে তিনি বিএ পাস করেন এবং একই বছর বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকেই তিনি চিচিংপাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ক্যাম্পের সকল মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং আসামের তেজপুর জেলার সেলুনিবাড়ি থেকে নিষ্পন্ন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি নেত্রকোনা জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে পার্টির সিদ্ধান্তে সোভিয়েত ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ করতে যান এবং পরের বছর ফিরে আসেন।
আরো পড়ুন
- অরবিন্দ সাংমা দিও নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা
- অনাথ নকরেক ছিলেন নেত্রকোণা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা
- অনিমা সিংহ ছিলেন একজন বিপ্লবী কৃষক আন্দোলনের নেত্রী
- বাদল মজুমদার একজন লেখক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা
- আনোয়ার হোসেন ছিলেন একজন সাম্যবাদী ধারার রাজনীতিবিদ
- আবদুল বারী ছিলেন সাম্যবাদী ধারার রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক
- আবু তাহের ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের যুগের বামপন্থী সমাজগণতন্ত্রী বিপ্লবী
কমরেড আবদুল বারী ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মোহনগঞ্জের খুরশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড করেন এবং সেখানের সংসদে জিএস নির্বাচিত হন। ট্রেনিং শেষ করে মোহনগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই বছর ২৮ ডিসেম্বর তাহমিনা ছাত্তারকে বিয়ে করেন। ১৯৮৬তে গড়ে ওঠা বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের তিনি নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। ২০০৭-এ তিনি বিদ্যালয়ের কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ময়মনসিংহ জেলা কমিটি আজীবন বিপ্লবী-র প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে।
রচনাকাল ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, কুরপাড়, নেত্রকোনা।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক ও গবেষক। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা এগারটি। ২০০৪ সালে কবিতা গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে আবির্ভূত হন। ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘মার্কসবাদ’ তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে চিন্তাশীল গবেষণামূলক লেখা তাঁর আগ্রহের বিষয়।